স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের সখীপুরে নেদারল্যান্ড প্রবাসী আজিজুল ইসলাম ও শামীমা ইসলাম দুই বছর আগে ইউটিউবে ভিডিও দেখে বাড়ির আঙিনায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন। প্রথম অবস্থায় শখের বসে পরীক্ষামূলকভাবে ৬শ’ বস্তায় চাষ করে সফলতা পেয়ে এ বছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। এতে তিনি ৮০ লাখ টাকা আদা বিক্রির আশা করছেন।
সরেজমিনে উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নে বহুরিয়া মধ্যপাড়া এলাকায় প্রবাসী আজিজুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়, কাঁঠালগাছ এবং পরিত্যক্ত আম বাগানের নিচ দিয়ে ছায়াযুক্ত জায়গাতেই সারি সারি বস্তায় আদা চাষ করছেন। ইতোমধ্যে আদা গাছ বড় হয়েছে, ফলনও আসতে শুরু করেছে। তাদেরকে দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকেরাও বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছেন। বস্তায় এভাবে আদা চাষ দেখতে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে উৎসাহী মানুষ।
প্রবাসী আজিজুল ইসলাম জানান, আমার বাবা ছিল কৃষক। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করে বড় হয়েছি। ৪০ বছরের বেশী সময় পরিবারসহ প্রবাসে থাকলেও দেশকে ভুলতে পারিনি। দেশের মাটি ও কৃষিকে ভুলতে পারিনি। প্রবাসে বসে ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষের ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই বছর আগে আমরা প্রথম অবস্থায় ৬শ’ বস্তায় আদা চাষ করেছিলাম। ফলনও হয়েছিল ভাল। হিসেব করে দেখলাম এটি খুব ভাল একটি চাষাবাদ এবং লাভজনক। তাই এ বছর খাগড়াছড়ি থেকে ৩০ মণ আদা এনেছিলাম। আর আমার গত বছরের ৪ মণ আদা বীজ হিসেবে রোপন করেছি। আমি বাণিজ্যিকভাবে প্রায় এক একর জমিতে ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি এবং আমার ৫০ শতাংশ বড়ই বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মাটিতে আদা চাষ করেছি। সব মিলিয়ে আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আল্লাহ্ যদি রহমত করে ৮০ লাখ টাকার আদা বিক্রির আশা করছি। এ কাজে আমার স্ত্রী আমাকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতায় করেছেন।
আজিজুল ইসলাম আরও জানান, বস্তায় আদা চাষের খরচ অনেক কম। বাড়ির উঠান, অনাবাদী কিংবা পরিত্যক্ত ছায়াযুক্ত জায়গাতেও চাষ করা যায়। প্রথমে বেলে দোআঁশ মাটির সাথে বিটি বালু, কচুরিপানা, ছাই, গোবর, ভূষি, খৈল, রাসায়নিক সার ইত্যাদি মিশিয়ে এক মাস ঢেকে রেখেছিলাম। পরে আবার মাটি মিশ্রণ করে বস্তায় ভরে আদা শোধন করে প্রতি বস্তায় ৫০-৬০ গ্রাম করে আদা রোপন করেছি। মাটির তুলনায় বস্তায় সুবিধা অনেক বেশী। বস্তায় চাষ করলে আদার কন্দ পচা রোগ খুব কম হয়। আর হলেও আক্রান্ত বস্তাটি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে ফেলা যায়। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে নতুন এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করার ইচ্ছে আছে।
প্রবাসী আজিজুলের স্ত্রী শামীমা ইসলাম বলেন, আমার বাবা এবং শ্বশুর দু’জনেই খুব ভাল কৃষক ছিলেন। তাই আমি বুঝি কৃষকের কষ্ট। আমার স্বামীকে সহযোগিতা করতে আমি নিজের হাতে ১০ হাজার বস্তায় আদা রোপন করেছি। আমরা যখন শুরু করি তখন অনেকে অনেক কিছু বলেছে। কিন্তু তবুও আমরা থেমে থাকিনি। আমাদের এই কৃষি উদ্যোগে অনেকের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন সবাই আমাদের বাহবা দেন।
এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিয়ন্তা বর্মন জানান, সখীপুর উপজেলা আদা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই অর্থবছরে প্রায় ১৯০ হেক্টর জমিতে আদা আবাদ হয়েছে এবং বস্তায় আদা চাষ হয়েছে ২০-২২ হাজার বস্তা। ফলন যদি ভাল হয়, কৃষকরা বস্তা প্রতি এক থেকে দেড় কেজি আদা পেতে পারে। সেই হিসাব অনুযায়ী ১৯০ হেক্টরে দুই হাজার মেট্রিকটনের উপরে ফলন হতে পারে বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে সখীপুর উপজেলায় অনেক কৃষকরা বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। বস্তায় আদা চাষের সুবিধা ছত্রাকের আক্রমণসহ অন্যান্য রোগবালাই কম হয়।