স্টাফ রিপোর্টার ॥
পাখির চোখে দেখলে মনে হবে এ যেন অ্যামাজানের কোন শাখা প্রশাখা। দ্বীপ-বদ্বীপ। কোন ড্রোন ছাড়লে যত দূর লেন্স যাবে তত দূর ক্যামেরা বন্ধী হবে সবুজের মোহনীয় রূপ। উঁচু জায়গায় কোথাও বন, কোথাও বনের কিছু স্মৃতি জাগানিয়া। কোথাও আনারস, কলার বন বনানী। নিচুতে খাল-বিল। আবার দু’পাশে উচু মাঝ খানে নিচু। এ রকম নিচু এলাকাকে বাইদ বলে থাকে অভিহিত করে থাকে স্থানীয় বসতিরা। তবে বনের ভেতরের পরিবেশ অনেকটা বিপন্ন। তবে উপর থেকে দেখলে মনে হবে সবুজের সমারোহ। বন বিল বাঈদ জালের মতো খালে এই সময়ে প্রকৃতিতে আমেজ করছে সবুজ আর সবুজ। ধানের খেত, গাছ থেকে শুরু করে পুরোটাই সবুজের মোহনীয় রূপ।
প্রকৃতির এমন অ্যামাজান খ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের কথাই বলছিলাম। মধুপুর গড়টি জামালপুরের কিছু অংশ থেকে শুরু করে ঢাকার গাজীপুর পর্যন্ত বিস্তত। মধুপুর বনকে পরিবেশবিদরা টাঙ্গাইলসহ দেশের বৃহৎ অঞ্চলের ফুসফুস বলে থাকে। আবার অনেকেই টাঙ্গাইলের আমাজনও বলে থাকে। টাঙ্গাইলের সর্ব উত্তরের জনপদের নাম মধুপুর উপজেলা। টাঙ্গাইলের মধুপুর, ঘাটাইল, সখীপুর, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, ভালুকা, গাজীপুর পর্যন্ত ভূমি রূপ, ভূ-প্রকৃতি প্রায় একই রকমের। দেশের বিশাল একটি অংশ নিয়ে এই বনাঞ্চল গড়ে উঠেছে।
টাঙ্গাইল বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রাচীন ভারতর্বষের ঐতিহ্যবাহী শাল বনাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বনভূতিতে শালগাছ মুখ্য উদ্ভিদ প্রজাতির বনের শ্রেণীবিন্যাসে শালবনকে গ্রীষ্মমন্ডলীয় আর্দ্র পত্রঝরা বনাঞ্চলের অর্ন্তভূক্ত করা হয়। ভূ-প্রকৃতি ভূতাত্তিক গঠন, জলবায়ু এবং মৃত্তিকার ধরণ শালবনের বিস্তৃতিতে ভূমিকা রাখে শালবন প্রধানতঃ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-র্পূব এশিয়ার হিমালয়ের পাদদেশব্যাপী আসাম থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত এবং মধ্য ভারতের কয়েকটি জেলাসহ পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় বিস্তৃত। শালবন দেশের মাত্র কয়েকটি জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো। এই বনাঞ্চলের বেশির ভাগ অংশই রয়েছে টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলায়। এটি ভাওয়ালের গড় ও মধুপুরের গড় নামে পরিচিত। বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের শালবন এলাকা সবচেয়ে বড়। ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদীর মাঝে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত এ বনভূমির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৬ কি.মি. এবং চওড়া ৮ থেকে ২৪ কি.মি.। টাঙ্গাইল বন বিভাগ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার বানার নদী ও টাঙ্গাইল জেলার বংশী নদী দিয়ে বিভক্ত। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১০০ কি.মি. উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত।
এ অঞ্চলের বিল-বাঈদের দৃশ্যগুলো দেখতে তেমন কোন পার্থক্য পাওয়া যাবে না। চোখ জুড়ানো সবুজ আর সবুজে ঘেরা। বাঈদগুলো এ সময়ে সেজেছে নতুন সবুজে। বিলের চার পাশে সবুজে রোপা ধানে ছেড়ে গেছে। গ্রামগুলো দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন সবুজে ঘিরে রেখেছে। ঘাটাইল উপজেলা থেকে ঘুরতে আসা এক নারী জেসমিন আক্তার জানান, মধুপুর ও ধলাপাড়া হয়ে তিনি সাগরদিঘীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরছেন। তারমতে, এই এলাকার পরিবেশ প্রকৃতি অনেক সুন্দর। সকাল বিকেল বেড়াতে ভালো লাগে। এজন্য তিনি পরিবার নিয়ে মাঝে মধ্যেই বেড়াতে আসেন। সাভার থেকে আসা স্বাধীন আজম বলেন, কালিকাপুর মলাজানিসহ ঘাটাইলের পূর্ব এলাকাগুলো অসাধারণ। মনোরম চোখ জুড়ানো দৃশ্য তার কাছে খুব প্রিয়। বিল-বাঈদ উচু নিচু টিলার বৈচিত্র্য দেখতে অনেক সুন্দর। মধুপুর বনের চারপাশ ও ভেতরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা বাঈদগুলো অনেক সুন্দর। বৈচিত্র্যময় সবুজে ঘেরা পুরো বনাঞ্চল। এখানে আসলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। পাখির ডাক শোনা যায়।
শীতের এই সময়ে দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা প্রকৃতিপ্রেমীরা বলেন, এই বন উজাড়ের ফলে বিপন্ন হচ্ছে বনাঞ্চল এলাকা। তবে ভূ-প্রকৃতি দেখতে মোহনীয়। এমন সবুজ সতেজ প্রকৃতি রক্ষায় বৃক্ষ রোপন বাড়াতে হবে। রক্ষা করতে হবে মধুপুরের শালবন। দেশি প্রজাতির গাছ রোপন করতে হবে বেশি বেশি। এভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।