মোস্তফা কামাল, সখীপুর ॥
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় বিতর্কিত ও সরকারি জমি থেকে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বন বিভাগ ও স্থানীয় বিএনপি। বন বিভাগের পক্ষ থেকে বসবাসরত বাসিন্দাদের নিজস্ব মালামাল সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয়েছে। এদিকে পৌর বিএনপির পক্ষ থেকে উচ্ছেদ বিরোধী পাল্টা মাইকিং করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বন বিভাগের এই উচ্ছেদ অভিযানকে অবৈধ ঘোষণা করে উপজেলাজুড়ে মাইকিং করেছে বিএনপি। সন্ধ্যায় সখীপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ৩টায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে উপজেলা ও পৌর বিএনপি।
বন বিভাগ বলছে, সরকারি নির্দেশনা থাকায় উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর বাসিন্দারা বলছেন, জীবন দিয়ে দেবেন কিন্তু বাপ-দাদার শত বছরের ভিটে-মাটি ছাড়বেন না। এ নিয়ে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ১০টি ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সখীপুরের অধিকাংশ ভূমি নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে ত্রিমুখী বিরোধ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, বনবিভাগ, ডিসির মধ্যে এই বিরোধ রয়েছে। অধিকাংশ ভূমি ১ নম্বর খাস খতিয়ান (ডিসির খাসজমি) দাবি করা হয়। ব্যক্তি মালিকানার স্বপক্ষেও রয়েছে এসএ রেকর্ড ও দিয়ারা রেকর্ডের কাগজপত্র। বেশকয়েকটি মৌজায় ব্যক্তি মালিকানার স্বপক্ষে সরকারি গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া একই জমিতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে রয়েছে বন আইন অনুযায়ী আপত্তি। এমন বিরোধের জেরে দীর্ঘদিন ধরে ত্রিমুখী বিরোধপূর্ণ ১৪টি মৌজাসহ মোট ৫১টি মৌজার খাজনা আদায় বন্ধ রয়েছে। এসব ভূমি জটিলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে আন্দোলন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত এসব ভূমি রেজিস্ট্রি চললেও এখন তাও বন্ধ রয়েছে। এসব জটিলতা নিষ্পত্তি না করেই বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিভিন্ন ইউনিয়নে বন বিভাগের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানের মাইকিং করা হয়। অভিযানের অংশ হিসেবে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বোয়ালী গ্রামে পুরোনো বসতভিটায় তৈরি করা একটি নতুন টিনের ঘর ভেঙে দেয় বন বিভাগ। এর প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে সখীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের এ আন্দোলন দীর্ঘদিনের। সখীপুরের সর্বস্তরের মানুষ এ ভূমি জটিলতার ভুক্তভোগী। এ কারণে আমরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছি। সরকার ও বন বিভাগ উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না গেলে শনিবারের আন্দোলন থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।
বন বিভাগের কালিদাস বিট কর্মকর্তা রতন চন্দ্র দাস ও বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিনুর রহমান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে মাইকিং ও উচ্ছেদ অভিযানের কথা স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, টাঙ্গাইলে ১ লাখ ২২ হাজার একর বনভূমির মধ্যে ৫২ হাজার একর জমি অবৈধ জবরদখলে রয়েছে। সরকারি জমি কোনো না কোনো দিন উদ্ধার তো হবেই। অন্তর্র্বতী সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। সেই অনুযায়ী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে।