স্টাফ রিপোর্টার ॥
মরণব্যাধি এইডসের জন্য দেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা টাঙ্গাইল জেলা। তবে এখানে এইচআইভি (এইডস) শনাক্তে ছিল না কোনো উদ্যোগ। অবশেষে টাঙ্গাইল সদর জেনারেল হাসপাতালে এইচআইভি শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে গত দুই মাসে টাঙ্গাইল জেলায় নতুন করে আরও সাতজন এইডস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে গণমাধ্যমে ‘সুরক্ষার অভাবে ছড়াচ্ছে এইডস’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। পরে টাঙ্গাইল জেলায় এইচআইভি (এইডস) সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জোরদার করে এইচআইভি (এইডস) শনাক্তকরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে।
টাঙ্গাইল ডেপুটি সিভিল সার্জন আজিজুল হক বলেন, এইচআইভি (এইডস) ভাইরাস বেশি মানুষের শরীরে শনাক্ত হওয়া মানেই মাত্রাতিরিক্তভাবে এইডস রোগী বাড়ছে তা নয়। এনজিও’র পাশাপাশি সরকারিভাবেও টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ডায়াগনোসিস বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়ানোর ফলে এইডস শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিভিন্ন এনজিও সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত ৫৯ বাড়িতে গড়ে ওঠা যৌনপল্লিতে রয়েছেন ছয় শতাধিক যৌনকর্মী। এছাড়া সহস্রাধিক ভাসমান যৌনকর্মীর পাশাপাশি রয়েছেন ১ হাজার ২০০ হিজড়া। প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার যৌনকর্মীর সঙ্গে কয়েক হাজার খদ্দেরের অবাধ মেলামেশা হয়।
টাঙ্গাইল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবজেল হক বলেন, এইচআইভি এইডস নিয়ে এনজিওর মাধ্যমে পরিচালিত কার্যক্রমও সরকারেরই অংশ। স্বাস্থ্য বিষয়ক অনেক কাজ বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে সরকার। টাঙ্গাইলে আহ্ছানিয়া মিশনের বিভিন্ন কার্যক্রম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে তদারকি করা হয়।
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ সাজ্জাত হোসেন শুভ বলেন, যক্ষ্মা ও এইচআইভি রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছে সরকার। তবে যক্ষ্মারোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু যৌনরোগীরা লোকলজ্জার কারণে আসেন না। শরীরে যখন নানা উপসর্গ দেখা দেয়, তখন তাঁরা বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। বর্তমানে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে যক্ষ্মারোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় এইচআইভি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে অনেকের শরীরেই এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে।
টাঙ্গাইলের ডেপুটি সিভিল সার্জন আজিজুল হক বলেন, টাঙ্গাইলে এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কের কিছু নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বৃদ্ধি পাওয়ায় এইডসের রোগী চিহ্নিত হয়েছে বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবাইকে জোরালোভাবে কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, গত অক্টোবর থেকে টিভি বা যক্ষারোগী শনাক্তকরণ কার্যক্রমের সময় এইচআইভি বা এইডসের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই টাঙ্গাইলে সাতজন এইডসে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়েছে।