নূর আলম, গোপালপুর ॥
বংশগত বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন একই বংশের ৫-৬ জন। এছাড়া এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ঔ বংশের ৯জন ব্যক্তি অকাল মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানা গেছে। রোগটির কারণে হাত-পাসহ শরীর কাঁপা, হাঁটতে না পারা, ঘাড় সোজা করতে না পারা, লালা পড়া, কথা বলতে না পারাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় আক্রান্তদের শরীরে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের ভুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা, ঐ বংশের পূর্ব পুরুষ মোহাম্মদ আলী বিয়ে করেন একই ইউনিয়নের সাজানপুর গ্রামের বাসিন্দা কাজুলী বেগমকে। কাজুলী বেগমের ভাই এই রোগাক্রান্ত ছিলেন। ৬ সন্তান জন্মদানের পর কাজুলী বেগম এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সে ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে রেখে মারা যায়। মোহাম্মদ আলী-কাজুলী বেগম দম্পতির ৩ মেয়ে মাবি ৩৫ বছরে, আবি ৪০ বছরে, সাফি ২৮ বছর বয়সে মারা যান।
এছাড়াও তাদের ছেলে সন্তান মসলিম উদ্দিন একই রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫০ বছর বয়সে ৩ ছেলে রেখে যারা যান। মসলিম উদ্দিনের বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪০) ৫ বছর আগে আক্রান্ত হয়। শহিদুলের বড় ছেলে আমিনুল ইসলাম (১৪) ৩ বছর আগে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। মুসলিম উদ্দিনের ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৫) এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ২ সন্তান রেখে ১বছর আগে মারা গেছে।
মোহাম্মদ আলী-কাজুলী বেগম দম্পতির আরেক ছেলে আবুল হোসেন (৬০) আক্রান্ত হয় ২০ বছর আগে মারা যান। আবুল হোসেনের ছেলে আক্রান্ত হাফিজুর রহমান (৪৫) ১০ আগে মারা যান। হাফিজুর রহমানের ছেলে সিফাত (২০) বর্তমানে একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবুল হোসেনের মেয়ে রোজিনা বেগম (৩৫) ২ সন্তান জন্মাদানের পর আক্রান্ত হলে স্বামী ডিভোর্স দিয়ে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। আবুল হোসেনের আরেক ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫০) এর মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (১৭) একই রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, দরিদ্র কৃষক পরিবারের সদস্য হওয়ায় অর্থাভাবে তাদের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। একবার শহিদুলকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে গিয়েছিলেন ডাক্তার রোগ ধরতে পারেনি। এই কারনে তাদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, অবিলম্বে সরকার দায়িত্ব নিয়ে পরিবারের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করুক।
এ বিষয়ে গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ডাক্তার খাইরুল ইসলাম বলেন, বর্ননা শুনে ও ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে তারা উইলসন ডিজিসে আক্রান্ত। এটা বংশগত রোগ, আক্রান্তদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সুচিকিৎসা দেয়া হবে। প্রয়োজনে টাঙ্গাইল বা ঢাকায় রেফার্ড করা হবে।