সাদ্দাম ইমন ॥
টাঙ্গাইল জেলায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। তাপমাত্রা আরও কমেছে। ফলে বেড়েছে শীত। আর তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঘনকুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলার বৃদ্ধ, শিশু ও খেটে খাওয়া মানুষ। ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারণে চলাচল করতে অসুবিধায় পড়েছেন দিনমজুর, যানবাহন চালক ও পথচারীরা। এদিকে জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে শিশু, মহিলা ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। এই সময়ে তাদের দুর্ভোগ চরমে।
টাঙ্গাইল জেলায় টানা দুই দিনে সূর্যের কোন দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘনকুয়াশা ঢাকা থাকে পথ-ঘাট ও প্রকৃতি। এ সময় হিমেল বাতাসে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হয়। কনকনে ঠান্ডায় ভোগান্তিতে পড়েছে অতিদরিদ্র, ছিন্নমূল, দিনমজুর ও বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবীরা। কুয়াশার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। তীব্র ঠান্ডায় অতিদরিদ্র মানুষগুলো খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। শীতের মৌসুম অনেক আগে শুরু হলেও তীব্রতা তেমন ছিল না। জনশ্রুতি আছে বছরের সবচেয়ে শীতল মাস পৌষ। কিন্তু শুরুতেও ছিল না শীতের তীব্রতা। প্রথম সপ্তাহ পরই পৌষের হাড় কাঁপানো শীত শুরু হয়। শীত বস্ত্রের অভাবে কাবু হয়ে পড়ছেন অনেক শিশু ও বৃদ্ধরা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টাও করছেন তারা। ঘনকুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে শীতে কষ্টে পড়েছে মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুপাখি। শীতে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে খামারিদের।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অফিস জানায়, জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় তাপমাত্রা কমেছে দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকাল ৯টার সময় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাসাখানপুর গ্রামের দিনমজুর মহিবুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ইটভাটায় কাজে যেতে হয় যতই কুয়াশা বা শীত পড়ুক না কেন। কারণ কাজ করলে আমাদের মুখে ভাত উঠবে। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে, তাদের খরচ জোগাতে হয়। আজহারুল ইসলাম বলেন, সকাল বেলা শীতের পোশাক খুলতেই দুপুর ১২টা বেজে যাচ্ছে। মাঠের কাজ করব কখন। বাঘিল গ্রামের দিনমজুর আদুরি খাতুন বলেন, এই কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশায় কাজে যাওয়া যে কি কষ্টকর তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তবে পরিবারের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে পারলে সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ভুলে যাই। তবে আজকে খুব বেশি শীত এবং ঘন কুয়াশা পড়েছে। আরেক নারী দিনমজুর রোজিনা খাতুন বলেন, প্রতিদিন সকালে একটি পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে কাজে যেতে হয় কারণ একটু গরমের পোশাক পড়ব, যা অভাবের সংসারে তা আর হয় না। মাথায় চিন্তা থাকে পরিবারের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে হবে। সারাদিন কাজ করে পাই মাত্র ২০০ টাকা মজুরি। একটু গরম পোশাক কিনব, টাকা পাব কোথায়। আমাদের আবার কিসের কুয়াশা আর কিসের শীত। কাজ করলে মুখে ভাত উঠবে, না করলে উপোস থাকতে হবে।
কৃষিজীবীরা জানান, ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড শীতে জবুথবু হয়ে পড়ছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। আর এই ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলার যত্ন নিতে হবে। আর ধানের চারার যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য চারার মাথার শিশিরগুলো ফেলে দিতে হবে।
টাঙ্গাইলে কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন জবুথবু
২৫ Views