বাসাইলে বিলপাড়ায় ঝিনাই নদীর পাড়ে ভাঙন ॥ গ্রামবাসীর ভোগান্তি

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল স্পেশাল বাসাইল লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বিলপাড়া বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর পাড় ভেঙে গেছে। নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ায় গ্রামবাসীর চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে গ্রামবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষিজমি ও বসতবাড়ি ভাঙার উপক্রম হয়েছে।
ভাঙার পাশে বসতবাড়ির মজনু মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে আমাদের জমিতেই রাস্তা তৈরী হইছে। রাস্তায় চলে যাওয়া সেই কৃষিজমিসহ আমাদের বসতবাড়ি ভাঙা শুরু হয়েছে। রাস্তার পাশে একটি ঘর ছিল। নদীর পাড় ভাঙার কারনে সেই ঘরটি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নদীর ভাঙন রুখতে অনেক জিও ব্যাগের বস্তা এনেছিল। কিছু কাজ করে জিও ব্যাগ ফিরত নিয়ে গেছে আমরা দেখছি। ভাল ভাবে কাজ করে নাই, এ তারিখে যে ভাঙছে, কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা এখন বাড়ীতে থাকতে পারুম কিনা তাই চিন্তায় আছি। মজনু মিয়া বলেন, একটা জমির উপর চারবার রাস্তা দিছি। এই তারিখে যদি পুরোপুরি ভেঙে যায় তাহলে আমার পরিবারের থাকার জায়গা থাকব না। আমার বাড়ীর সীমানায় এখন রাস্তা। নদীর ভাঙন রোধে এরপর উপযুক্ত কোন পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি প্রশাসন।
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের “বিলপাড়ার মিষ্টি”র জন্য বিখ্যাত বিলপাড়া গ্রাম। ঝিনাই নদী থেকে ভাঙা সুরু রাস্তার উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। দিনের বেলায় পথচারীরা সাবধানে হেঁটে চলাচল করতে পারে। রাতের অন্ধকারে বৈদ্যুতিক আলোবিহীন রাস্তায় প্রতিদিনই পথচারীরা হোঁচট খেয়ে ঝিনাই নদীর খাদে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছেন। দিনের বেলায় মোটরসাইকেলের আরোহীরাও খাদে পড়ে হাত-পা ভেঙ্গে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। আদাবাড়ী চরপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত আজিজুল হক মাস্টার বলেন, দীর্ঘদিনের কাঁচা প্রশস্থ নদী পাড়ের পথটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষজন চলাচল করতে পারছে না। এই পথে মির্জাপুর, বাসাইল ও সখীপুরের শতশত মানুষ সিএনজি, মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করতো। মিষ্টির জন্য বিখ্যাত বিলপাড়া বাজার এই অঞ্চলের একমাত্র বড়বাজার। সবাই এই বাজারে ব্যবসা করেন। কিন্তু পথটি ভেঙে যাওয়ায় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ চরম বেকায়দায় পড়েছে।
আদাবাড়ী চরপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুর রহমান বলেন, পাকিস্থানী আমলে নদীর মাঝ পর্যন্ত কৃষিজমি ছিলো। সেটা ভাঙতে ভাঙতে মজনু মিয়ার বাড়ীর সীমানায় রাস্তা চলে গেছে। এই রাস্তা দিয়া আমরা সবসময় চলাচল করি। এই রাস্তা দিয়া বাসাইল উপজেলা সদর হয়ে টাঙ্গাইল শহরে যাই। এই রাস্তার মেরামত খুবই জরুরী। এছাড়া নদী ভাঙনে চকের জমিও চলে যাচ্ছে। কাজিরাপাড়া গ্রামের আবু বকর বলেন, আদাজান বিলপাড়া ঝিনাই নদীর ভাঙনে আমরা বিপর্যস্থ। নদীর পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশ ভাঙনে আমাদের রাস্তাসহ গ্রামের কৃষিজমি ভাঙনে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ। সারাবছরই ঝিনাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝিনাই নদীর ভাঙনের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। যেটা নদীর পাড় ভাঙনে বড় সমস্যা। আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলেন, হাবিবুর রহমান হবির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা চলে আসছে। সহযোগিতা করছেন স্থানীয় আবুল হোসেন, করীম মেম্বার, বিশু, হাবিবুর রহমানের ছেলে জাহিদ, অহিদুল ইসলাম। এলাকার লোকজন বাঁধা দিলে বালু ব্যবসায়ীরা বলে তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। আদাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, দীর্ঘকাল ধরে নদীর পাড়ের এই হাফ কিলোমিটার রাস্তা সংকটে আমরা আছি। আশেপাশের সব গ্রামের মানুষ বিলপাড়া বাজারেই বাজার করে। যে কারনে এই রাস্তা সংস্কার করা খুবই জরুরী। মির্জাপুর থেকে আগত ছাত্র সিফাত ও খন্দকার ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা মোটরসাইকেল যোগে মির্জাপুর থেকে বিলপাড়ার নেওয়াজ আলীর মিষ্টি দোকানে যাচ্ছি। নদীতে রাস্তা ভাঙার কারনে আমাদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান মামুন বলেন, নদী ভাঙন ঠেকাতে আমরা কয়েকবার জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করেছি। তারপরও ভাঙন ঠেকাতে পারিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে এই ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অতিদ্রুত ঝিনাই নদীর পাড় বেঁধে নদীর ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।

 

 

 

২১ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *