একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুতে ঘাটাইলের ভবনদত্ত গ্রামে বইছে শোকের মাতম

ঘাটাইল টাঙ্গাইল লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঢাকার সাভারে অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজন নিহতের ঘটনায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ভবনদত্ত গ্রামে চলছে শোকের মাতম। এই গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক ফারুক হোসেন সিদ্দিকী, তার স্ত্রী, ছেলে ও স্ত্রীর বোন নিহত হওয়ার খবর শোনার পর পুরো গ্রাম শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন সিদ্দিকী (৫০) তার অসুস্থ ছেলেকে ফুয়াদ সিদ্দিকীকে (১৪) নিয়ে বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ১১ টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। রাত ২টার দিকে তাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সাভারে দুর্ঘটনার শিকার হয়। অ্যাম্বুলেন্সটিতে আগুন ধরে যায়। এতে ফারুক হোসেন সিদ্দিকী, তার ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী, স্ত্রী মহসিনা সিদ্দিকী (৩৮) ও তার স্ত্রীর বড় বোন সীমা আক্তার (৪০) নিহত হন। স্থানীয়রা জানান, তাদের মৃত্যুর খবর বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকাল ৭ টার দিকে বাড়িতে পৌঁছে। তখনই স্বজনদের কান্নার রোল শুরু হয়। কান্না শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে জানতে পারে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর। মুহুর্তের মধ্যে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এই সংবাদ। গ্রামবাসীরা শোক জানাতে আসতে শুরু করে ফারুক সিদ্দিকীর বাড়িতে।

 

 

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ফারুক সিদ্দিকীর বাড়ির দিকে যাচ্ছে গ্রামের লোকজন। বাড়ির সামনে স্বজন ও গ্রামবাসীদের ভিড়। চারজনের মরদেহই রয়েছে ঢাকায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়িতে পৌছায়নি চারজনের মরদেহ। এদিকে গ্রামে চলছে দাফনের প্রস্তুতি। বাড়ির উঠানে আনা হয়েছে চারটি খাটিয়া। লাশ এলে এই খাটিয়াতেই নেয়া হবে কবর দিতে।
নিহত ফারুক সিদ্দিকীর ভাই মামুন সিদ্দিকী জানান, ফারুক সিদ্দিকীর বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী ভবনদত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্র। ফুয়াদ রক্ত রোগে আক্রান্ত। এর আগে ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছে। ফুয়াদ তার মায়ের সাথে নানার বাড়ি গোপালপুর উপজেলার মাকুল্যা গ্রামে অবস্থান করছিলেন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ফুয়াদের শারিরীক জটিলতা দেখা দেয়। চিকিৎসক ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দেন। গোপালপুর থেকে ফুয়াদের মা মহসিনা সিদ্দিকী ও খালা সীমা আক্তার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ঘাটাইলের হামিদপুর বাস্টস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফুয়াদের বাবা রাত ১১ টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠেন।

 

ওই গ্রামের বাসিন্দা সোমা সিদ্দিকী বলেন, এই দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর পুরো গ্রাম স্তব্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের সবাই শোকাহত। সবাই লাশের অপেক্ষায় রয়েছে। ফারুক সিদ্দিকীর সহকর্মী সহকারী শিক্ষক রুবেল মিয়া বলেন, ফারুক স্যার অনেক নীতিবান মানুষ ছিলেন। তিনি স্কুলের সবাইকে আগলে রাখতেন। ফারুক সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই জাকির হোসেন সিদ্দিকী বলেন, এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। ফারুক ভাইয়ের ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী (১১) বেঁচে রয়েছে। বাবা-মা ভাইকে হারিয়ে ও কিভাবে বাঁচবে।
নিহতদের স্বজনরা জানান, ঢাকায় আইনীপ্রক্রিয়া বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে শেষ হয়েছে। এরপর চারজনের মরদেহ নিয়ে বিকেল ৫টার দিকে রওনা হয়েছে। পৌঁছার পরেই গ্রামে জানাজা শেষে কবর দেয়া হবে।
এ বিষয়ে দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হেপলু জানান, বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ১১ টার দিকে ফারুক সিদ্দিকীর সাথে তিনি এক সঙ্গে চা পান করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্স এলে তাকে উঠিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে যান। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে উঠেই তাদের মৃত্যুর সংবাদ পান।

 

১৩ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *