হাসান সিকদার ॥
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে দুইটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে ছাড়পত্রহীন অবৈধ ইটভাটা। এই ইটভাটায় কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এই ইটভাটার স্কুল সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর আসা যাওয়া এবং বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের চলে খেলাধুলা। ফলে ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে ও শিক্ষার্থীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা সেতু-ভূঞাপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বাগবাড়ী এলাকায় ভাঙার পাড় ব্রিজের উত্তরে বিবিসি নামে অনুমোদনহীন ইটভাটি গড়ে তোলা হয়েছে। এই ইটভাটার সংলগ্নে বাগবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগবাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিকসহ মসজিদ ও মাদরাসা রয়েছে।
সরেজেমিনে দেখা যায়, স্কুলের পাশেই আবাদি জমিতে এই বিবিসি ইটভাটা স্থাপন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র পোড়ানো হচ্ছে ইট। চুল্লিতে কাঠ দিয়ে পোড়ানো কালো ধোঁয়ার কারণে আশপাশ ছেয়ে যায়। ধুলোর আস্তরণ পড়ে বই ও বেঞ্চের উপর। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন-২০১৯ অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরুপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। এমন আইন থাকলেও সেটা না মেনে স্থাপন করা হয়েছে ‘বিবিসি’ ইটভাটাটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ইট পোড়ানোর চুল্লির ধোঁয়া, রাস্তার ধুলা এবং মালামাল আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক ও বাংলা ট্রলি গাড়ির শব্দে অতিষ্ঠ স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও আমরা অতিষ্ঠ। ধোঁয়ায় যেমন পরিবেশের ব্যাপক সাধিত হচ্ছে তেমনি আমরা এলাকাবাসী চরম স্বাস্থ্যঝুকিতে রয়েছি। প্রতিবাদও করতে পারি না।
বাগবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ও বাগবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুল সংলগ্ন এই ইটভাটার কালো ধোঁয়া এসে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পরিবেশ নষ্ট করছে। এতে আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আমরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছি। স্কুলের কাছ থেকে এই ইটভাটাটি আমরা দ্রুত অপসারণ চাচ্ছি। বাগবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম জানান, স্কুল সংলগ্ন এই ইটভাটার কারণে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যবহৃতের পাশাপাশি পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে এবং শিক্ষার্থীরা শ্বাস কষ্টের শিকার হচ্ছে। কয়েক বছর আগে স্কুলের পাশে এই ইটভাটাটি বন্ধে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেও তার কোনো প্রতিকার পাননি।
এদিকে অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকার করে ইটভাটার ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন, ইটভাটাটির ছাড়পত্র নেই। তাহলে কিভাবে ভাটা পরিচালনা করছেন জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, এ ব্যাপারে ওই ইটভাটা বন্ধে আদালতে মামলা করা হয় এবং গত ২০২৪ সালে চার্জসীটও দেওয়া হয়েছে।