আদালত সংবাদদাতা ॥
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচার এক যুগেও শেষ হয়নি। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন যুক্তিতর্কের অপেক্ষায় রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত ফারুক আহমেদের কন্যা ফারজানা আহমেদ। আর এ ক্ষোভ নিয়েই শনিবার (১৮ জানুয়ারি) পারিবারিকভাবে পালিত হয়েছে ফারুক আহমেদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী।
ফারুক আহমেদের পরিবারের অভিযোগ, সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ এলেই কারাগারে থাকা কোন আসামী ‘অসুস্থ’, তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য দিতে না আসাসহ বিভিন্ন কারণে বার বার পিছিয়ে গেছে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার কাজ। তারা দ্রুত এই মামলার বিচার নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন। মামলাটি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৩ সালের (১৮ জানুয়ারি) টাঙ্গাইল পৌর শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করা হয়। বিগত ২০১৪ সালে এই মামলায় জড়িত থাকা সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা এবং মোহাম্মদ আলী নামের দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যা মামলার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা’র জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে।
তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বিগত ২০১৬ সালের (৩ ফেব্রুয়ারি) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার চার ভাইসহ ১৪ জনকে আসামী করা হয়। বিগত ২০১৭ সালের (৬ সেপ্টেম্বর) আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরমধ্য দিয়েই বিচার কাজ শুরু হয়।
এই মামলার আসামী আমানুর রহমান খান রানা আত্মসর্মপনের পর তিন বছর কারাগারে ছিলেন। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। গত (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তার অপর ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ফারুক হত্যা মামলায় জামিন পেলেও এখন অন্য মামলায় কারাগারে আছেন। অন্য দুই ভাই কাকন, বাপ্পা এবং আসামী মোহাম্মদ কবির পলাতক রয়েছেন। দুই আসামী আনিসুর রহমান রাজা ও মোহাম্মদ সমির কারাগারে মারা গেছেন। জামিনে রয়েছেন মোহাম্মদ আলী, মাসুদুর রহমান, নাছির উদ্দিন নুরু, ফরিদ আহমেদ, ছানোয়ার হোসেন ও বাবু।
নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমদ সুমন মজিদ মুঠোফোনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে। বিচারের আশায় অপেক্ষা করতে করতে এই মামলার বাদি আমার মা গত বছর (২৯ ডিসেম্বর) মৃত্যুবরণ করেছেন। মামলার আসামীরা প্রভাবশালী। তারা নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন।
এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন টাঙ্গাইলের সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত সরকারি কৌশুলি মনিরুল ইসলাম খান। তিনি জানান, গত (১১ নভেম্বর) এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এই মামলার ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন মামলাটির যুক্তিতর্ক হবে। তারপরেই রায় হবে।
এদিকে, শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকালে তার কবরে পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে দুপুরে তার কলেজ পাড়ার বাসভনে দোয়া ও দুঃস্থদের ভোজের আয়োজন করা হয়।