স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা খাদ্য গুদামের এলএসডির সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেকের বিরুদ্ধে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছেন খাদ্য গুদামে কর্মরত কর্মচারীরা।
এদিকে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকেও ১০৫টি ভি-ইনভয়েসে অগ্রীম স্বাক্ষর করে ফেসে গেছেন তিনি। এ কারণে গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) তাকে শো’কজ করা হয়েছে। একই সাথে আগামী তিন কার্যদিবসের মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতেও বলা হয় তাকে। গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুন স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে এ শোকজের বিষয়টি জানানো হয়। জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিশ্বাস বেতকা খাদ্য গুদামের এলএসডির সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেক কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি কর্মকস্থল ত্যাগ করার সময় ১০৫টি ভি-ইনভয়েসে অগ্রীম স্বাক্ষর করে যান। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। এ নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় তাকে শোকজ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও চাকুরিবিধি অমান্য করে বিদেশ ভ্রমনের অভিযোগ উঠে। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিগত ২০২০ সালের (২৯ ডিসেম্বর) খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বিভাগীয় মামলা করেন। তবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে সাহস পায়নি কেউ। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সরকারের দাপট দেখিয়ে নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। এরমধ্যে বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে দেখা যায় মোট ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ করেছেন। এর পাশাপাশি রয়েছেন বিএস খতিয়ান নম্বর ১০৩৮৪ ঝিলংজা কক্সবাজার মৌজার ২ দাগের ১০ শতাংশ এবং বিএস খতিয়ান নম্বর ৩২০১ কাকারা চকরিয়া মৌজায় ৪০ শতাংশ জমি রয়েছে জিয়াউলের নিজ নামে।
এছাড়া তার বড় ভাই লক্ষ্যাচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিমকে চকরিয়ায় ১০ টাকা মূল্যের চাল বিতরণের জন্য ‘ভাই ভাই ট্রেডার্স’ নামে একটি লাইসেন্স করে দেন। তবে পরবর্তীতে ১০ টাকা মূল্যের চাল কালোবাজারে বিক্রির দায়ে সেই লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা খাদ্য গুদামের এলএসডির সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেক দায়িত্ব পালনের পর থেকেই তার লোকজনদের দিয়ে ডিও হোল্ডার এবং বাইরের বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিম্নমানের চাল ও গম কিনে গুদামে মজুদ করে রাখেন। পরবর্তীতে সরকারি ভাল মানের চাল ও গম বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। এ নিয়েও গত বছরের (৮ অক্টোবর) নিম্নমানের চাল মজুদের বিষয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট এবং ইচ্ছাকৃতভাবে গম ওজনের কম দেখানোর জন্য গত (২৭ আগস্ট) তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, মজুদনকৃত চাল ও গম নিম্নমানের প্রমান পাওয়া যায়। তারপরও অজ্ঞাত ক্ষমতার দাপটে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেন জানান, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ টাঙ্গাইল বিশ্বাস বেতকা এলএসডি-১ এর সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেককে শোকজ করেছেন। আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুন স্বাক্ষরিত একটি পত্র তিনি পেয়েছেন।