আদালত সংবাদদাতা ॥
টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক রোববার (২৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বহুল আলোচিত এই মামলার বিচারের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে পৌঁছাল। আগামী (২ ফেব্রুয়ারি) বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ দিয়েছেন আদালত। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদুল হাসানের আদালতে এই মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। টানা সাড়ে ৪টা পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামী পক্ষের আইনজীবীরা নিজ নিজ পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁশুলি মোহাম্মদ সাইদুর রহমান স্বপন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে ২৭ জন স্বাক্ষীর জবানবন্দি, জেরা, কয়েকজন আসামী ও স্বাক্ষীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে শোনান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন যে আসামীরা দোষী। তিনি আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান আদালতে। প্রায় দেড় ঘন্টা আসামী পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর আসামী পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
আসামী পক্ষে যুক্তিতর্কে ঢাকা থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কাজী মাহাবুবসহ পাঁচজন আইনজীবী অংশ নেন। আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে আদালতকে জানান, এই মামলার এজাহারে আসামীদের নাম ছিল না। তাদের সন্দেহও করা হয়নি। পুলিশ নির্যাতন করে কয়েকজন আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে দিতে বাধ্য করেছে। পরবর্তীতে ওই আসামীরা জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনও করেছে। তারা আদালতকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ স্বাক্ষী দিয়ে আসামীদের অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা আসামীদের খালাসের দাবি জানান আদালতে।
উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত আগামী (২ ফেব্রুয়ারি) রায় ঘোষণার তারিখ দেন।
প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ও তাঁর তিন ভাই এই মামলার আসামি। বিগত ২০১৩ সালের (১৮ জানুয়ারি) জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। বিগত ২০১৪ সালের আগস্টে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামক দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে এই হত্যার সঙ্গে তাঁরা সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। পরে তাঁরা আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে আওয়ামী দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তাঁর ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার নাম বের হয়ে আসে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহেদ, আবদুল খালেক ও সনি আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতেও হত্যার বর্ণনা উঠে আসে। গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফীজুর রহমান ২০১৬ সালের (৩ ফেব্রুয়ারি) আমানুররা চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। বিগত ২০১৭ সালের (৬ সেপ্টেম্বর) আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
টাঙ্গাইলে বহুল আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার রায় ২ ফেব্রুয়ারি
২৪ Views