দীর্ঘ ১৬ বছর পর নিজ বাড়িতে ভূঞাপুরের তারিফুল ॥ স্বজনদের আনন্দ

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল স্পেশাল ভূঞাপুর লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
খেলাধুলার প্রশিক্ষণ নিতে বান্দরবান থেকে ঢাকার পিলখানায় এসেছিলেন সৈনিক তারিফুল ইসলাম। অপরাধ না করেও মিথ্যা মামলায় ১৬ বছর কেটেছে কাশিমপুর কারাগারে। ২ মাসের সন্তান মোবিন ইসলাম এখন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। হারিয়েছেন শ্বশুর-শাশুড়িসহ অনেক আত্মীয়স্বজন। শেষবারের মতো দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাদের মুখ। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে নিজ বাড়ির আঙিনায় পা রাখেন তারিফুল ইসলাম। এ সময় তাকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশের।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফসলান্দি গ্রামের শাহ আলম ও খোদেজা দম্পতির ছেলে তারিফুল ইসলাম। তারিফুল বিগত ২০০৬ সালের (১৫ ফেব্রুয়ারি) ১০ রাইফেল ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। বিগত ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি মির্জা লিমাকে বিয়ে করেন। ওই বছরেই (২২ ডিসেম্বর) মোবিন নামে এক পুত্রসন্তানের বাবা হন। বিগত ২০০৯ সালের (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিডিআর বিদ্রোহের আগের দিন কর্মস্থল বান্দরবান থেকে ঢাকার পিল খানায় স্পোর্টসের প্রশিক্ষণের জন্য যান তারিফুল। তিনি জানান, প্রশিক্ষণ চলাকালীন সকালে গুলির শব্দ পান। ভিতরে গিয়ে দেখতে পান অস্ত্রধারীদের। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে বলে বিডিআর সদস্যদের। যোগ দিতে বলে অপারেশনে, হুমকি দেওয়া হয় মেরে ফেলার। অস্ত্রধারী অধিকাংশই ছিল কম উচ্চতার। আবার কেউ কেউ ছিল অধিক উচ্চতা সম্পন্ন। তাদের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। তারা বিডিআর সদস্য ছিলে না। আমরা যে অস্ত্র ব্যবহার করতাম অপারেশনে অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীদের সে ধরনের অস্ত্র ছিল না।

 

তারিফুল ইসলাম জানান, বাইরে আলো দেখার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। মাঝে মধ্যে আন্দোলন হতো তখন আশা জাগতো। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনা সরকার তা দমন করে দিলে আশা ভেস্তে যায়। গত (৫ আগস্ট) ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনার পতনের খবরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন জাগে। আজ যাদের জন্য বাইরের আলো দেখা সেই ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা কৃতজ্ঞতা জানাই। মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। পুণরায় চাকরিতে যোগদানের আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সীমান্তের অতন্দ্র এ প্রহরী।
তারিফুলের একমাত্র সন্তান ১৬ বছর বয়সী মোবিন জানায়, আমার ২ মাস বয়স থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মিথ্যা মামলায় আব্বু কারাগারে ছিলেন। এতো বছর পর আব্বুকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরতে পেরে কি যে আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
স্ত্রী মির্জা লিমা জানান, বিয়ের এক বছর পরেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিনা দোষে কারাগারে যেতে হয়েছে আমার স্বামীকে। দীর্ঘ ১৬ বছর কি যে যন্ত্রণায় কেটেছে তা বলতে পারবো না। মেয়ের জামাইয়ের শোকে শেষ পর্যন্ত আমার মা-বাবা মারাই গেলেন।
তারিফুলের বাবা শাহ আলম ও মা খোদেজা জানান, ছেলেকে যে এভাবে পাবো তা ভাবিনি। মহান আল্লাহ তাআলা ওকে (তারিফুল) বুকে ফিরিয়ে দেওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।

 

 

১৬ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *