স্টাফ রিপোর্টার ॥
ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার চার বছরেও চালু হয়নি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় সরকারি মেডিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস)। কবে চালু হবে কেউ বলতে পারছেন না। ফলে বিপুল টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্কুলের একাডেমিক ভবনসহ সকল অবকাঠামো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
জানা যায়, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিগত পাঁচ বছরে সারাদেশে ১২টি মেডিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) নির্মাণ করে। এরই একটি টাঙ্গাইলের মধুপুর ম্যাটস। মধুপুর পৌরশহরের কাইতকাই এলাকায় টাঙ্গাইল-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই পাঁচ একরে ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ম্যাটসের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয় বিগত ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে। চার, পাঁচ ও ছয় তলাবিশিষ্ট পৃথক ছয় ভবনে রয়েছে একাডেমিক ভবন, অধ্যক্ষের বাসস্থান, ছাত্র হোষ্টেল, ছাত্রী হোষ্টেল, শিক্ষক কোয়ার্টার এবং চতুর্থ শ্রেণির কোয়ার্টার। স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরানী কনস্ট্রাকশন প্রায় চার বছর আগে অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শেষ করে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরে এটি হস্তান্তরে লাগে দুই বছর। কিন্তু হস্তান্তরের পরেও লোকবল নিয়োগ না দেওয়ায় ম্যাটস চালু হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি। ম্যাটসের পুরো ক্যাম্পাস চত্বর এখন অরক্ষিত। দেখভাল করার কেউ নেই। পুরো চতুর ঘাস আর জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। হয়ে উঠেছে মাদকসেবীদের নিরাপদ ঘাঁটি।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ বিগত ২০২৩ সালের ১৯ মার্চে মধুপুরসহ দেশের আরো পাঁচটি ম্যাটসে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরকে চিঠি দেন। কিন্তু স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর এসব ম্যাটস চালুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে আছে।
মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান জানান, দুই বছর আগে স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর মধুপুর ম্যাটসের নবনির্মিত ভবন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু কি কারণে শিক্ষা অধিদপ্তর এখনো ম্যাটসটি চালু করেনি তা জানা যায়নি।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দীন জানান, জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় মধুপুর ম্যাটস চালু হয়নি। টাঙ্গাইলে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে চারটি ম্যাটস রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে মেডিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট পদে সরকারিভাবে নিয়োগ বন্ধ। এমতাবস্থায় আরেকটি সরকারি ম্যাটস টাঙ্গাইলে স্থাপনের কোনো প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয় না।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী পরিচালক জানান, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিগত সরকারের আমলে মধুপুরসহ দেশের কয়েক স্থানে রাজনৈতিক তদবিরে কিছু ম্যাটস ভবন নির্মাণ করে। সারাদেশে ১৬টি ম্যাটসে শিক্ষাকার্যক্রম চালু রয়েছে। এখান থেকে পাশ করা বহু যুবক এখন বেকার। নতুন করে আরো ম্যাটস স্থাপনের বিষয়টি ছিল রাজনৈতিক অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত। নবনির্মিত ম্যাটসের ভবন ও অবকাঠামো স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে।