
সাদ্দাম ইমন ॥
আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পহেলা ফাল্গুন। ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। শীতের রিক্ততা মুছে প্রকৃতিজুড়ে সাজ সাজ রব। বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠেছে নতুন জীবনের ঢেউ। নীল আকাশের সোনাঝরা আলোর মতোই আন্দোলিত হৃদয়। আপ্লুত। আহা! কী আনন্দ আকাশে বাতাসে। গাছের শাখায় জেগে উঠেছে নতুন পাতার সবুজ কুঁড়ি। শিমুল, পলাশ বনে বয় রঙিন ফুলের সৌরভ। ফাগুন হাওয়ায় দোল দিয়ে এসে গেছে বসন্ত। সভ্যতার চাকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকা ঋতুরাজকে বরণ করে নিতে কুহু স্বরে ডেকে উঠছে কোকিল। বসন্তকে বরণ করে নিতে তারুণ্য সেজেছে বাসন্তী সাজে। আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে/ তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে, করো না বিড়ম্বিত তারে/ আজি খুলিয়ো হৃদয় দল খুলিয়ো/ আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো’। কবিতায় এভাবেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্তকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
বসন্তের প্রকৃত রূপ দেখা যায় গ্রামে; শহরে তেমন নয়। ষড়ঋতুর দেশে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিতেই মূলত বসন্ত জানান দেয় তার আগমনী বারতা। গ্রামের মেঠো পথ, নদীর পাড়, বৃক্ষরাজি, মাঠভরা ফসলের ক্ষেত বসন্তে রঙিন হয়ে ওঠে। নিসর্গের বর্ণচ্ছটায় প্রকৃতি হয়ে ওঠে বাঙ্ময়। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই তখন বাঙালির মনে দোলা লাগে, হৃদয় উচাটন হয়। দিনটিকে আরো উপভোগ্য করে তুলতে টাঙ্গাইলে বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিভিন্ন সংগঠনগুলো।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত। আজ পহেলা ফাল্গুন। তাই ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটেছে।
বসন্তের আগমনের সাথে গাছে গাছে ভরে উঠতে শুরু করছে সবুজ পাতা আর নানা রঙ্গের ফুল। শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ারা সেজেছে সূর্যের সাথে তাল মিলিয়ে রক্তিম রঙে। কোকিলরা কুহু কুহু গান ধরেছে। ফুলে ফুলে ভ্রমরের গুন গুনানি সেই সাথে শোনা যায় ঝড়া পাতার নিক্কন ধ্বনি। বসন্ত খুঁজে পায় নিজের নামের স্বার্থকতা। এ দিন বিশেষ করে তরুণীরা বাসন্তি রঙের শাড়ি আর মাথায় হলুদ ফুল দিয়ে নিজেদের নুতন করে সাজিয়ে তোলে। অন্যদিকে ছেলেরা সাজে হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে। গ্রাম-বাংলায় বিশেষ আয়োজনে চলে পিঠা উৎসব। আর শহরে এটি পায় বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা।
বসন্ত ঋতু লুকিয়ে আছে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসের ভিতর। তবে অনুভবের জায়গা থেকে বলতে গেলে শুধু ফাল্গুন মাসের কথাই বলতে হবে। বাংলা বছর গণনায় ফাল্গুন ১১তম মাস হলেও কালের আবর্তনে এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটি শুধু একটি মাসের নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সারা পৃথিবীর ঋতু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এই বসন্ত ঋতু তথা ফাল্গুন মাসে দক্ষিণ এশীয় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানেই এ সময়টি আশীর্বাদ রূপে আসে। এ সময়টা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু মানের বর্ষা হয় যার ফলে সেসব স্থানে বৃক্ষরা পত্রপল্লবে নিজেদের জানান দেয়। পৃথিবী সূর্যের দিকে ঢলে পড়ে বলেই শীত তার ইতি টানতে বাধ্য হয়। এই সময়টাতে প্রাণিকুলের প্রজননের মোক্ষম সময়। পৃথিবীজুড়ে নুতন নুতন প্রাণের সঞ্চার হতে থাকে। তারা প্রকৃতির শ্রী বৃদ্ধির পাশাপাশি টিকিয়ে রাখে পরিবেশ ও প্রতিবেশ।