সখীপুরে বংশাই নদীতে যুগ যুগ ধরে একটি সেতু নির্মাণের অপেক্ষা

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল স্পেশাল লিড নিউজ সখিপুর

হাসান সিকদার ॥
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দাঁড়িয়াপুর গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বংশাই নদী। সখীপুর ও বাসাইল উপজেলাকে আলাদা করেছে এই নদী। যুগ যুগ ধরে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন দুই পারের লোকজন। শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ও বর্ষা মৌসুমে নৌকা হচ্ছে লোকজনের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা। সাথে ভারী মালামাল বা রোগী থাকলে অতিরিক্ত ৩০ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয় মানুষের।
সরেজমিনে জানা যায়, সখীপুর উপজেলার দাঁড়িয়াপুর ইউনিয়নের বরইতলা এলাকায় বংশাই নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। ওই সাঁকো দিয়েই দুইপারের লোকজনসহ বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। সেতু না থাকায় দুই উপজেলার ১৪ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নদীর এপারে-ওপারে রয়েছে দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাদ্রাসা, চারটি কিন্ডারগার্টেন ও চারটি সাপ্তাহিক হাট।
স্থানীয়রা জানান, সখীপুর উপজেলার দাঁড়িয়াপুর, লাঙ্গুলিয়া, আকন্দপাড়া, আবাদি, চাকলাপাড়া, কৈয়ামধু, বেতুয়া, শোলাপ্রতিমা ও দেওবাড়ী এবং বাসাইল উপজেলার সুন্না, গিলাবাড়ী, কল্যাণপুর, মৈলানপুর, ডুমনীবাড়ী, বার্থা, কলিয়া ও কাউলজানী গ্রামের লোকজন এ নদী দিয়ে পারাপার হন। দাঁড়িয়াপুর গ্রামের বৃদ্ধ হাকিম মিয়া বলেন, নেতারা ভোটের সময় বলে ব্রিজ করে দিবে। ভোটের পর আর তাদের খবর থাকে না। এভাবে যৌবনকাল থেকে ব্রিজ তৈরি হবে শুনতে শুনতে বুড়ো হয়ে গেলাম এখনও ব্রিজ হয়নি। আরেক বৃদ্ধ আজগর আলী বলেন, কত এমপি-চেয়ারম্যান হইলো, সবাই আশা দেয়, কেউ আর ব্রিজ করে দেয় না। মরার আগে কি ব্রিজ দেখে যেতে পারমু না? কথা হয় নাহিদ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আশপাশের এলাকার ছেলে-মেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। চলাচলের সুবিধার জন্য শুকনা মৌসুমে এলাকার লোকজন ১০০ গজের সাঁকো নির্মাণ করেন। তবে বর্ষায় পানিতে বাঁশের সাঁকো ডুবে যায়। তখন নৌকা দিয়ে চলাচল করেন লোকজন। ফলে দুই পাড়ের শিক্ষার্থীসহ অন্যদের ভোগান্তি পড়তে হয়। আমরা একটি ব্রিজ চাই। এই ব্রিজটা হলে আমাদের সব দিকেই সুবিধা হবে।
দাঁড়িয়াপুর গ্রামের আল আমিন বলেন, এখানে ব্রিজ না থাকার কারণে নৌকা ও বাঁশের সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। নৌকাডুবিতে প্রাণও চলে গেছে ওই নদীতে। সরকার তো কত উন্নয়ন করেছেন দেশে। আমাদের একটাই দাবি, এই নদীতে ব্রিজ করা হোক। তাহলে আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না আমাদের। গিলাবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও বরইতলা ঘাটে কোনো সেতু করা হলো না। চেয়ারম্যান এমপিরা সবাই আশা দিয়েছিলেন, কেউ তাঁদের কথা রাখেনি। এই ব্রিজটা হলে অর্থনৈতিকসহ সব দিকে সুবিধা হবে। কষ্ট করে ৩০ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হবে না। গিলাবাড়ী গ্রামের কৃষক ছানোয়ার মিয়া বলেন, এখানে ব্রিজ হলে খাদ্যশস্য, শাকসবজি ও মুমূর্ষু রোগী নিয়ে সখীপুর যেতে মাত্র ৮ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হতো। আর এখন ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হয়। গর্ভবর্তী নারী ও বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সময় মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। আমাদের ভোগান্তির শেষ নাই। আমরা ব্রিজ চাই। আরেক কৃষক মতি মিয়া বলেন, ধান বিক্রি করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অসুবিধা হয়। সময় মতো বাজারে পৌঁছাতে না পারলে দাম পাওয়া যায় না। রোগীদের বহনে অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারে না। ব্রিজটা হলে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। একদিকে অর্থনৈতিকভাবে আমরা লাভবান হবো, আরেক দিকে আমাদের সময়ও কম লাগবে।
দাঁড়িয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী আসিফ বলেন, আমি স্থানীয় এমপির সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম। এমপি আমাকে বলেছিল- খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের ব্রিজটি করে দিবেন।
এ বিষয়ে সখীপুর এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, সেতুটির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। আগের সরকার সেতু নির্মানের অনুমোদন দেয়নি। নতুন সরকারের অনুমতি পেলে সেতুটি নির্মাণের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

২১ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *