বিনোদন রিপোর্টার ॥
এবারও বাউল, ভক্ত-শিষ্যসহ হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমনে মহামিলনের উৎসবে পরিণত হয়। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় হেফাজতে ইসলামের আপত্তির মুখে স্থগিত হয়ে যাওয়া লালন স্মরণোৎসব উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছে। ফকির লালন সাইজির ১৩৪তম তিরোধান বর্ষ উপলক্ষে ‘মধুপুর লালন সংঘের’ আয়োজনে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে মধুপুর রাণী ভবানী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই উৎসব অনুষ্টিত হয়।
মধুপুর লালন সংঘের আহ্বায়ক সবুজ মিয়া বলেন, মরমী কবি লালন সাইজির ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে মধুপুর লালন সংঘ প্রতি বছরের মতো লালন স্মরণোৎসব ২০২৫ আয়োজন করে থাকি। উৎসব উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন, মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবির, লালন স্মরণোৎসবের আহ্বায়ক সবুজ মিয়া, মধুপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোতালেব হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক ও জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফাতেমা রহমান বিথী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মধুপুর লালন সংঘের সভাপতি ফরহাদ হোসেন তরফদার। পরিচালনায় ছিলেন সংঘের উপদেষ্টা এস এম শহীদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয় এবং মধুপুর লালন সংঘের উপদেষ্টা প্রয়াত সাংবাদিক এম এ রউফের মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, মধুপুর লালন সংঘের উপদেষ্টা অলোক কুমার চৌধুরীর সঞ্চালনায় স্মরণোৎবে সংগীত পরিবেশন করেন কুষ্টিয়া থেকে আসা লালন শিল্পী শাহাবুল, বাউল রশীদ, গামছা নার্গিস, মুন মোনালিসা, কাজল রেখা এবং মধুপুর লালন সংঘের নিয়মিত শিল্পীরা। এর আগে গত (১২ ফেব্রুয়ারি) স্থগিত হওয়া মধুপুর লালন স্মরণোৎসব (২৩ ফেব্রুয়ারি) জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অডিটোরিয়ামে সীমিত (ছয়-সাতশো) আসন সংখ্যার কারণে সেখানে উৎসব আয়োজন সম্ভব ছিল না। সেজন্য গত (১৮ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসক টাঙ্গাইল বরাবর বাসস্ট্যান্ডে (স্থগিত হওয়ার আগে নির্ধারিত) অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৯২০ ফেব্রুয়ারি) মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রানী ভবানী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উৎসব আয়োজনের পরামর্শ দেন এবং মধুপুর লালন সংঘ থেকে তা গ্রহণ করা হয়।
মরমী কবি লালন সাইজির ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে মধুপুর লালন সংঘ গত (১২ ফেব্রুয়ারি) লালন স্মরণোৎসব ২০২৫ আয়োজন করে। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের বাধায় অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করা হয়। তখন মধুপুর উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল্লাহ বলেছিলেন, ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় আমরা ভ্রান্ত লালন মতাদর্শ প্রচারে আপত্তি জানিয়েছি।
অনুষ্ঠান স্থগিত করার পর বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলে উপজেলা প্রশাসন এবং মধুপুর বিএডিসি ক্যাম্পে স্থাপিত সেনা ক্যাম্প থেকে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়। পরে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে সমোঝোতার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মধুপুর হেফাজতে ইসলাম প্রতিশ্রুতি দেয় অনুষ্ঠান আয়োজনে তারা কোনো বাধার সৃষ্টি করবে না।
টাঙ্গাইলের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ছাত্র ফেডারেশনের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি ফাতেমা রহমান বিথী বলেন, মধুপুর লালন স্মরোণৎসব বন্ধ করা হয়েছিল, হেফাজত ইসলামের বাধার মুখে। কিন্তু পরবর্তীতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্মরোণৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে মধুপুর রানী ভবানী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে। তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ হবে সকল ধর্মের, সকল বিশ্বাসের মানুষের। রাষ্ট্র সবার ধর্ম, সংস্কৃতি পালনের অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এটাই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা।