কালিহাতীর ইউএনও শাহাদাত হুসেইনের অশ্রুসিক্ত বিদায়

কালিহাতী টাঙ্গাইল

সোহেল রানা, কালিহাতী ।।

সবাইকে কাঁদিয়ে বদলী জনিত কারণে কর্মস্থল থেকে অশ্রুসিক্ত বিদায় নিলেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলাবাসীর হৃদয়ের মানুষ, সৃষ্টিশীল এক কর্মবীর ইউএনও শাহাদাত হুসেইন।

তিনি ছিলেন এক নতুন কালিহাতী উপজেলা গঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা, শিক্ষানুরাগী, উদ্ভাবনী চিন্তা শক্তির এক মহানায়ক। তাই তো ইউএনও শাহাদাত হুসেইন কে বিদায় জানাতে আবেগাপ্লুত কালিহাতীর মানুষ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে তার বিদায়কে সম্মান জানিয়ে অশ্রু ঝরিয়েছে সাধারণ মানুষ।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিনটি ছিল কালিহাতীর ইউএনও শাহাদাত হুসেইন এর শেষ কর্মদিবস।

এদিন বিকেলে নতুন ইউএনও মোঃ খায়রুল ইসলাম কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ ও দ্বায়িত্ব হস্তান্তর করেন তিনি।

পরে নতুন ইউএনও’র সাথে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয় পর্ব শেষে বিদায় বেলা কালিহাতী উপজেলায় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হুসেইন কে বিষণ্ন মনে দেখা যায়।

দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় কর্মস্থল এবং এই উপজেলার মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মায়া তাকে আবেগাপ্লুত করে।

জানা গেছে ইউএনও শাহাদাত হুসেইন কে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় বঙ্গভবনে পদায়ন করা হয়েছে। তাই তো এত আয়োজন বিদায়ের। দিনটা উপজেলা বাসীর কাছে এক বিষাদময়।

ইউএনও শাহাদাত হুসেইন ছিলেন সাধারণের কাছে বিশ্বাস ও আস্থার নাম। তার হাসিমুখ দেখে সবাই ভরসা পেতেন, কথা বলার সাহস পেতেন। সর্বসাধারণের জন্য তার দরজা সবসময় খোলা ছিল,দারিদ্র্য, নিপীড়িত মানুষ সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেতো। তাইতো সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা ও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।

বিদায় সেতো তিন অক্ষরের একটি শব্দ কিন্তু এর গভীরতা কতখানি তা উপলব্ধি করলেই কেবল বোঝা যায়। কালিহাতীবাসী আজীবন মনে রাখবে বিদায়ী এই ইউএনওকে।

আবারও কখনো হয়তো তিনি কালিহাতীর মানুষের মাঝে আসবেন, সেই অপেক্ষায় থাকবে সবাই।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন শাহাদাত হুসেইন দিনরাত এক করে কাজ করেছেন। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে মানুষকে সেবা দিয়ে ভালোবাসা অর্জন করে নিয়েছেন তিনি।

শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের দক্ষ, মেধাবী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করেছেন। উপজেলায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি অনিয়ম প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও মেধা বিকাশে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও সেমিনার আয়োজন, বাজার মনিটরিং, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, কিশোর কিশোরী ক্লাব সক্রিয় করা।
এছাড়াও উপজেলা মিডিয়া এন্ড আইটি সেন্টার স্থাপন, যেখানে ১৪ টি কম্পিউটার রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। এছাড়াও পলিথিন ও প্লাষ্টিকের ব্যবহার বন্ধে পুরো উপজেলা সবুজায়িত করার লক্ষ্যে গ্রীণ কালিহাতী নামক একটি অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা। উপজেলা পরিষদ চত্বরে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাডমিন্টন কোর্ট নির্মাণ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন তিনি।

সর্বোপরি উপজেলায় দীর্ঘ ১ বছরেরও অধিক সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে গেছেন তিনি। তাই তার বদলির খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন উপজেলার অনেক মানুষ।

 

২২ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *