
আদালত সংবাদদাতা ॥
আগে পিকআপ ভ্যান, অটো চালাতেন সাভার আশুলিয়া এলাকায়। নিয়মিত নেশা করেন। এ কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে নেশার যোগান ও সংসার চলে না। তাই শুরু করেন ছিনতাই ও ডাকাতি। নেশার আসর থেকে একেক সময় একেক দলকে (গ্রুপকে) সাথে নিয়ে ছিনতাই, ডাকাতি করতেন। এটাই আলমগীর শেখের পেশায় পরিনত হয়। নিয়মিত ছিনতাই, ডাকাতি করেই নেশার টাকা যোগার করতেন আলমগীর। তাই গত (১৭ ফেব্রুয়ারি) কয়েকজন নেশাখোরকে সাথে নিয়ে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি করেন আলমগীর। এ সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানীর ঘটনাও ঘটে। রিমান্ডে থাকা আসামীরা এমন তথ্য দিয়েছে পুলিশকে।
টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) আলমগীরকে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সাধুরপারা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ডাকাতির সময় লুন্ঠিত টাকা ও মালামাল উদ্ধার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি সাভার উপজেলার আশুলিয়া এলাকা থেকে তার আপনভাই রাজিব হোসেন শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইল আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। মির্জাপুর আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুন আলমগীরকে ৬ দিনের এবং রাজিবকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গোয়েন্দা পুলিশ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইজনকে তাদের হেফাজতে নেয়। আলমগীর শেখ ও রাজিব শেখ মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার আমতলি গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে। তারা আশুলিয়া এলাকায় অবস্থান করে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আহসানুজ্জামান জানান, এই মামলায় এর আগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রিমান্ডে রয়েছেন শহিদুল ইসলাম নামের একজন। শহিদুল জিজ্ঞাসাবাদকালে আলমগীর শেখের তথ্য দেন। পরে তথ্যদাতা (সোর্স) ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে আলমগীরের অবস্থান সনাক্ত করা হয়। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সাধুরপারা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তার কাছ থেকে লুন্ঠিত টাকা ও কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর আলমগীর জানান, লুন্ঠিত মালামাল তার ভাইয়ের কাছে রেখে এসেছেন। পরে তাকে নিয়ে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আশুলিয়ার ধানসোনা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে লুন্ঠিত ১০টি মুঠোফোন, ইমিটেশনের গহনা, তিনটি ব্যাগ এবং কয়েকজন যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ডাকাতিতে ব্যবহৃত দুইটি ছুড়ি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, ডাকাতিকালে ওই বাসের যাত্রী একজন সাবেক সেনা সদস্যের সামরিক ব্যাগ ছিনতাই করেন আলমগীর। পরে ওই ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বাস থেকে নেমে যান। আলমগীর পুলিশকে জানিয়েছেন, সামরিক পোশাকের কাপড়ে তৈরি ব্যাগ সাথে থাকলে ভোর বেলা পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ সন্দেহ করবে না। তাই তিনি ওই ব্যাগটিই সাথে নেন।
রিমান্ডে থাকা আলমগীর পুলিশকে জানিয়েছেন, সাভার আশুলিয়া এলাকায় শতশত মাদাকাসক্ত যুবক রয়েছে। যারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওইসব এলাকায় শ্রমিকের কাজ করতে এসে নেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। তারাই নানা অপরাধে জড়িত। এই সব যুবকদের নেশার প্রলোভন দেখিয়েই তাদের আলমগীর ছিনতাই, ডাকাতিতে নিয়ে যান। আলমগীর জানিয়েছেন, বড় কোন ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটানোর পর তিনি তার শশুরবাড়ী নেত্রকোনার পূর্বধলায় চলে যেতেন। পরে ওই অপরাধের আলোচনা থেমে গেলে ফিরে আসতেন আশুলিয়ায়। লুন্ঠিত টাকা পয়সা শেষ হলে আবার শুরু করতেন ছিনতাই, ডাকাতি।
উল্লেখ্য, গত (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দিনগত রাতে ইউনিক রোড রয়েলসের আমরি ট্রাভেলস নামক বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে ৩০/৩৫ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রীবেশী ৮/৯ জন ডাকাত অস্ত্রের মুখে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে যাত্রীদের টাকাপয়সা, মালামাল লুন্ঠন করে। এ সময় তারা নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানিও করে। ঘটনার তিনদিন পর (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে মির্জাপুর থানায় ওমর আলী নামে এক যাত্রী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও মির্জাপুর থানা পুলিশের সমন্বয়ে একটি বিশেষ টিম গঠন করে দেন। ওই দিনই টিমের সদস্যরা ডাকাতদের সন্ধানে মাঠে নামে। গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) গোয়েন্দা পুলিশ সাভারের গেন্ডা এলাকা থেকে শহিদুল ইসলাম, মোঃ সবুজ ও শরীফুজ্জামান শরীফ নামক ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে মোঃ সবুজ ও শরীফুজ্জামান শরীফ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) আদালতে জবানবন্দি দেন। তারা এখন টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছে।