মির্জাপুরে শিশু ধর্ষনকারীদের গ্রেফতারসহ শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন

টাঙ্গাইল মির্জাপুর

স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ১০ বছরের এক শিশুকে ধর্ষনের ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক ফিরোজ মিয়াসহ গ্রাম্য মাতাব্বরদের গ্রেফতার ও কঠোর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সামবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৯ মার্চ) দুপুরে আজগানা ইউনিয়নের হাটুভাঙ্গা বাজারে আজগানা ইউনিয়নবাসি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সামবেশের আয়োজন করে।
ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন টাঙ্গাইল জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের আহবায়ক আলামিন, সহ-সমন্বয়ক যোবায়ের আহমেদ, মির্জাপুর উপজেলার সমন্বয়ক ইমন সিদ্দিকী, সিয়াম, নেহা, অপরুপা, ছাত্রশিবিরের মির্জাপুর কলেজ শাখার সভাপতি মোজাহিদ, সেক্রেটারী আরাফাত হোসেন প্রমুখ। এ সময় ধর্ষক ফিরোজ মিয়া ও গ্রাম্য মাতাব্বর বাবুল, মালেক, ফাজু, ইউনুছ, নুরইসলাম, আলম, খোরশেদ ও আলীমসহ ঘটার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানানো হয়।
এর আগে শিশু ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রাম্য শালিসে মাতাব্বরগন শিশুর ইজ্জতের মুল্য দেড় লাখ টাকায় রফা করে। শালিসে ধর্ষককে জুতাপেটা করা হয়। দেড় লাখ টাকার মধ্যে ৯২ হাজার টাকা শিশুর পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকী ৫৮ হাজার টাকা নিয়ে মাতাব্বরগন লাপাত্তা। লোকলজ্জায় মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে অসহায় পরিবার। ঘটনা জানাজানির পর এলাকায় তোলপার হলে পালিয়ে যায় ধর্ষক। অমানবিক এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে শনিবার (৮ মার্চ) সকালে সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও মির্জাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আইনী ব্যবস্থা নিতে ধর্ষিতা শিশু ও তার মাকে খুঁজে বের করে থানায় ডেকে এনে অভিযুক্তদের নামে মামলা নিয়েছেন।
জানা গেছে, আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসির স্ত্রী দ্ধিতীয় শ্রেণী পড়ুয়া শিশু কন্যাকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। সংসারের অভাব অনটনের মধ্যে শিশুর মা গামেন্টেসেও কাজ করেন। গত সোমবার (৩ মার্চ) মেয়েকে বাড়িতে রেখে তার মা কাজে যান। বাড়িতে অন্য কেউ না থাকায় কুড়িপাড়া গ্রামের নওসের আলীর ছেলে ফিরোজ মিয়া (৩২) শিশুকে কৌশলে ধর্ষন করে এবং তার মোবাইলে ভিডিও করে। ভিডিও করে তাকে হুমকি দেয় ঘটনা কাউকে বললে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ধর্ষনের ঘটনার কয়েক দিন পর বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার মাতাব্বর বাবুল, মালেক, ফাজু, ইউনুছ, নুরইসলাম, আলম, খোরশেদ ও আলীমসহ ১৫-২০ জন মাতাব্বর গ্রাম্য শালিসে ধর্ষক ফিরোজকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা এবং জুতাপেটা করা হয়। দেড় লাখ টাকার মধ্যে ৯২ হাজার পরিশোধ করা হলেও বাকী টাকা নিয়ে লাপাত্তা দিয়েছে মাতাব্বরগন। মাতাব্বরদের চাপে ঘটনা মিমাংসা করা হলেও শিশু কন্যাকে নিয়ে বিপাকে পরেন পরিবার। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়ে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন।
এদিকে ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ধর্ষক ও মাতাব্বরদের শাস্তির দাবীতে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। শনিবার (৮ মার্চ) মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার মির্জাপুর সার্কেল এইচ এম মাহবুব সিদ্দিকী ও মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোশারফ হোসেনের সার্বিক সহযোগিতায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ধর্ষিতা শিশু ও তার মাকে খুঁজে বের করে রাতে থানায় নিয়ে আসেন। রাতে ধর্ষিতার পরিবারকে সার্বিক নিরাপত্তা এবং শিশুর মাতা ধর্ষকসহ মাতাব্বরদের নামে মামলা দায়ের করেছেন।
অপরদিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুকে ধর্ষন ও ভিডিও করার খবর ছড়িয়ে পরলে এলাকায় শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে ধর্ষিতা শিশুর মা বলেন, ধর্ষক ফিরোজ ও তার পরিবার এবং মাতাব্বরদের চাপে শালিসে রাজি হয়েছিলাম। লোকলজ্জার ভয়ে আমি প্রথমে মামলা করতে সাহস পাইনি। উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক মাস্তি চাই এবং এবং আমার শিশু কন্যাসহ আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম এবং মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোশারফ হোসেন বলেন, কুড়িপাড়া গ্রামে শিশু ধর্ষনের ঘটনাটি খুবই অমানবিক এবং দুঃখজনক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি জানার পর প্রশাসন থেকে শিশুর পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। শিশু ও তার মাকে খুঁজে বের করে থানায় এনে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধর্ষক ফিরোজ ও মাতাব্বররা পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারে কাজ করেছেন পুলিশ।

 

৩১ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *