টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মিষ্টি মুচলেকা দিয়ে প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের টাঙ্গাইল শহরের বাড়ি দখল করে “পাগলের আশ্রম” চালু করার ঘটনায় মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছে তার পরিবার। এদিকে দখলে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি শনিবার (৮ মার্চ) রাতে মুচলেকা দিয়ে প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
জোয়াহেরুল ইসলামের পরিবার সূত্র জানায়, বাড়ি দখল করে পাগলের আশ্রম চালু করার ঘটনায় ওই বাড়ির তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত জোয়াহেরুল ইসলামের দূঃসম্পর্কের ভাগ্নে শাহ আলম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করার জন্য রোববার (৯ মার্চ) বিকেলে ৩টার দিকে টাঙ্গাইল সদর থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থানায় না থাকায় কর্তব্যরত কর্মকর্তা মামলা নেয়নি। সন্ধ্যার পর মামলা দায়েরের জন্য আবার তারা থানায় যাওয়ার কথা রয়েছে।
মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সংগঠক মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টির বিরুদ্ধে বাসার গেটের তালা ভেঙে ও ছয়তলা ভবনের কলাপসেবুল গেট ভেঙে প্রবেশ এবং ১৭ জন “পাগলকে” রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রওশনারা খানের কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগও আনা হয়েছে মারইয়াম মুকাদ্দাসের বিরুদ্ধে।
এদিকে জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি থেকে শনিবার (৮ মার্চ) রাতে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের প্রশাসন সরিয়ে নেয়। পরে রাত দেড়টার দিকে মারইয়াম মুকাদ্দাসকে মুচলেকা/অঙ্গিকারনামা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগে তাকে সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলা সহকারি কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে ডেকে নেয়া হয়। অঙ্গিকারনামায় মারইয়াম মুকাদ্দাস বলেছেন, ‘আমি আইনি অধিকার ব্যতিরেকে অন্যের ব্যক্তিগত বাড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন ১৭ জন নারী-পুরুষকে আবাসনের চেষ্টা করে অপরাধ করেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার পোষ্টের কারণে ক্ষেত্র বিশেষে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে তার দায় আমার উপর বর্তায়। আমি আমার নেতিবাচক ও বেআইনি কৃতকর্মের জন্য মানবিক বিবেচনায় ক্ষমাপ্রার্থী।’ তিনি ভবিষ্যৎতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয় এমন কোন পোস্ট ফেসবুকে করবেন না। এছাড়া কারও ব্যক্তিগত বা সরকারি সম্পদ দখল বা ভাঙচুর করাসহ কোন অপরাধে লিপ্ত হবেন না বলে অঙ্গিকারনামায় স্বাক্ষর করেছেন। অঙ্গিকারনামায় মারইয়াম মুকাদ্দাসের স্বামী শাহ আলমাসসহ ৫জনকে স্বাক্ষী রাখা হয়েছে।

জোয়াহেরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করতে যাওয়া প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহম্মেদ জানান, তিনি থানার বাহিরে ছিলেন। এ বিষয়ে কিছু জানেন না। পরে যদি ওনারা আসেন, তখন কথা হবে।
ঘটনার দুইদিন আগে মারইয়াম মুকাদ্দাস ওরফে মিষ্টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের বাসা “পাগলের আশ্রম”, প্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খানের বাসা “প্রতিবন্ধিদের আশ্রম”, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বাসা “অ্যানিমেল শেল্টার”, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেলের বাসা “বৃদ্ধ আশ্রম”, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বাসা “এতিমখানা” এবং আওয়ামী লীগ অফিস “পাবলিক টয়লেট” করা হবে। সেখানে তিনি লিখেছিলেন ‘আরও নাম সাজেস্ট করুন, তথ্য দিন। এক এক করে সামাজের ও টাঙ্গাইলের উন্নয়নের কাজে লাগুক আওয়ামী লীগের অবৈধ সম্পদ।’
আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক পরিচয়দানকারী মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি শনিবার (৯ মার্চ) টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর ছোট কালিবাড়ী এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল করেন। পরে ওই বাড়িতে ১৭ জন মানসিক প্রতিবন্ধী ছিন্নমূল মানুষকে নিয়ে “পাগলের আশ্রম” চালু করেন। পরে রাতে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা সহকারি কমিশনারের (ভূমি) রহুল আমীন শরীফের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়ে ওই বাড়ি থেকে ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে যান।
গত (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জোয়াহেরুল ইসলাম আত্মগোপনে চলে গেছেন। তার বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ অর্ধডজন মামলা হয়েছে। মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি বাসাইল উপজেলা যশিহাটি গ্রামের মাজহারুল ইসলামের মেয়ে। এর আগে গত (৬ ফেব্রুয়ারি) তার নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম, সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমানের বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইল শাখার সদস্য সচিব আবু আহমেদ শেরশাহ বলেন, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে নেই। উনার কোন কর্মের দায় আমরা নেব না। আন্দোলনের সময় অনেকেই সক্রিয় ছিল।

 

৩৭ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *