স্টাফ রিপোর্টার।।
সারাদেশে চলমান ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল শেষে ধর্ষকের বিচারের দাবিতে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ধর্ষকের শাস্তি দ্রুত বিচার আইনে কার্যকর করার দাবি জানায়।
রবিবার (৯ মার্চ) দুপুর দেড়টায় ক্যাম্পাসের মাল্টিপারপাস ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জননেতা আব্দুল মান্নান হলের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল করে তুলে ক্যাম্পাস “তুমি কে আমি কে আসিয়া, আসিয়া, ধর্ষকের সাজা একটাই ফাঁসি ছাড়া কথা নাই” ধর্ষকদের কারখানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় ‘ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ২৪ বাংলায় ‘ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি।
এ সময় বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারী ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সমাপ্তি খান বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত আছি।গতকাল পর্যন্ত এই কয়েক দিনে অনেকগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে তিন থেকে চারটি ছিল শিশু, যারা তাদের বয়সের কারণে দেশের বা দুনিয়ার ঘটনা সম্পর্কে তেমন কিছু বোঝারও কথা না। অথচ তারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে,এমনকি গ্যাং রেপের শিকারও হচ্ছে। এরপরও ধর্ষণের কোনো কার্যকর বিচার হচ্ছে না। সারা দেশে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন বেশ কিছুদিন ধরে চলছে, তবুও সরকার কিংবা রাষ্ট্র কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত মৃত্যুদণ্ড। ধর্ষককে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত, যেন অন্য কোনো ধর্ষক এই ধরনের জঘন্য কাজ করার আগে অন্তত দশবার ভাবে। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জেবা সামিহা করবি বলেন, প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে,আর এটি এখন যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠেছে আমাদের সামাজে।যার কারণে ধর্ষকরা অপরাধ করার আগে একবারও ভাবছে না শাস্তির কথা, কারণ এই সমাজ অপরাধীর বিচার করার আগে ভুক্তভোগীর পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তোলে- সে পর্দা করত কি না? ওড়না পরত কি না? অথচ বাস্তবতা হলো, ধর্ষক একজন দন্ডনীয় অপরাধী, তার কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করি। তিনি আরো বলেন, ধর্ষকের মনে ভয় সৃষ্টি করতে হবে। অপরাধীকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নতুন বাংলাদেশ আমরা এই বিচারহীরতা সংস্কৃতি আর দেখতে চাই না।
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে একের পর এক শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। এর মধ্যে মাগুরার ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমনকি আমাদের টাঙ্গাইল জেলাতেও ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। মির্জাপুরের হাটুভাঙ্গা এলাকাতেও এক শিশুকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্থানীয় প্রশাসন মাত্র এক লাখ টাকার বিনিময়ে ধর্ষককে মুক্তি দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা এমন বিচার ব্যবস্থা চাই না, যেখানে টাকার বিনিময়ে ধর্ষকরা পার পেয়ে যায়। আমাদের দাবি- ধর্ষকদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে, প্রয়োজনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। এমনকি ইসলামের বিধান অনুযায়ী তাদের পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত। ধর্ষকদের যদি গ্রেপ্তার করে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে অপরাধের মাত্রা কখনোই কমবে না। তাই তাদের জনসম্মুখে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হলে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ অনেকাংশে হ্রাস পাবে। ক্রিমিনালজি অ্যান্ড পুলিশ সাইন্স (সিপিএস) বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আখতারুজ্জামান সাজু বলেন, নারীকে পণ্য বানানোর যে সংস্কৃতি বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত নারীদের মর্যাদাকর জীবন নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য গত কয়েক দিনে সারাদেশে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরই প্রতিবাদ স্বরুপ বিক্ষোভ মিছিল করে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।j