টাঙ্গাইলে ছাত্র সংগঠক মিষ্টি আরও ৩ দিনের রিমান্ডে

আইন আদালত টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর লিড নিউজ

আদালত সংবাদদাতা ॥
ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নিজের পরিচিতি ও গুরুত্ব বাড়াতে এবং এই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়াতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে বাড়িগুলো দখলের উদ্যোগ নেন। চার দিনের রিমান্ড শেষে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ এমন তথ্যই পেয়েছে। তবে কোন সংগঠনের সাথে তার সম্পৃক্ততা আছে কিনা সে তথ্য এখনও পায়নি পুলিশ।
চার দিনের রিমান্ড শেষে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টিকে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে টাঙ্গাইল সদর আমলী আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মাহবুব খাঁন ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টির পক্ষে জেলা এডভোকেট বারের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন ও সিরাজুল ইসলাম শুনানিতে অংশ নেন। তারা মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টির জামিন চান। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টিকে জিজ্ঞাসাবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি টাঙ্গাইল শহরে একটি এনজিও করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সে সময় কিছু আওয়ামী লীগ নেতার অসহযোগিতার কারনে সেটি ঠিকমতো চালাতে পারেননি। বিগত ২০২০ সালে এনজিওটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই ওইসব নেতাদের প্রতি তার ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভের কারনেই বাড়িঘর ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নেতাদের বাড়ি ভাঙচুর ও দখল করে দাতব্য প্রতিষ্ঠান করার পক্ষে ছিলেন না। মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি তার কিছু অনুসারি নিয়ে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে ভাঙচুর ও দখলের উদ্যোগ নেন।
মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টির বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের যশিহাটী গ্রামের দোহার গ্রামে। ওই গ্রামের মাজহারুল ইসলামের মেয়ে তিনি। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সরেজমিন মারইয়াম মোকাদ্দাস মিষ্টির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার অসুস্থ বাবা টিনের ঘরের বারান্দায় শুয়ে আছেন। সে সময় মারইয়ামের মা বাড়িতে ছিলেন না। তিনি জানান, দীর্ঘ দিন কুয়েতে ছিলেন। দুই সন্তানের মধ্যে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি বড়। ছোট ছেলে সিঙ্গাপুর গেছে কয়েক মাস আগে। আমার বড় মেয়ে মিষ্টি টাকা দিয়ে ছোট ভাইকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছে। মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি কোথায় পড়ালেখা করেছে সে সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করলে তার বাবা বলেন, আমি বিদেশে থাকতাম বেশি সময়, কোথায় লেখাপড়া করেছে তা ঠিক জানি না। স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানায়, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি গ্রামে থেকেই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে। তারপর ঢাকা চলে যায়।
পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছে, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি ঢাকায় একটি ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেয়। পরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসন ডিজাইনে স্নাতকে ভর্তি হলেও কোর্স শেষ করতে পারেননি। রহস্যজনকভাবে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতের কাশ্মিরসহ একাধিক দেশ সফর করেছেন বিভিন্ন সময়। টাঙ্গাইলে এনজিও করতে ব্যর্থ হয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন। পরে গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ব্যাপক পরিচিতি পায়। সেই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে গত (৫ আগস্ট) সরকার পতনের পর জেলা ও পুলিশ প্রশাসনেও গুরুত্ব পেতে শুরু করে।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহম্মদ জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল ও চাঁদা দাবির উদ্দেশ্য, বিদেশ গমনের কারণসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে আরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাই তাকে আবার রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত (৬ ফেব্রুয়ারি) মিষ্টি তার কিছু অনুসারি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় স্কেভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের এবং সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরনের বাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় ওই বাড়িগুলোর সব মালামাল লুটপাট হয়। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করারও ঘোষনা দেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর দখল করে বৃদ্ধাশ্রম, পাগলের আশ্রম, এতিমখানা করা হবে বলে মিষ্টি জানিয়েছিলেন।
তার ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৮ মার্চ) শহরের আকুরটাকুর পাড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ির তালা ভেঙে মারইয়াম প্রবেশ করেন। সেখানে ১৮ জন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী-পুরুষ উঠিয়ে দেন। ওই বাড়িটিতে “পাগলের আশ্রম” চালুর ঘোষনা দেন। পরে রাতে একজন নির্বাহী ম্যাসিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই বাড়ি খালি করে। পরে মিষ্টি প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
মিষ্টি অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িও দখলের ঘোষনা দিয়েছিলেন। জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রোববার (৯ মার্চ) রাতে বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই রাতেই তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *