স্টাফ রিপোর্টার ॥
প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের ধারক ও বাহক টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী নওয়াব শাহি জামে মসজিদ। ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী হয়ে স্ব মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে কয়েকশ’ বছর ধরে। টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে পৌরসভায় অবস্থিত ধনবাড়ি নওয়াব শাহী জামে মসজিদ। ধনবাড়ি নওয়াব শাহী জামে মসজিদ ইসলামী ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী হয়ে ঐতিহাসিক স্থাপত্যের অন্যতম নির্দশন।
ষোড়শ শতাব্দীতে সেলজুক তুর্কি বংশের দুই ভাই ইসপিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির প্রথম ভাগ (এক কক্ষবিশিষ্ট মসজিদ) নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে, সম্রাট আকবরের সময় তারা ধনবাড়ীর অত্যাচারী জমিদারকে পরাজিত করে এ অঞ্চলের দায়িত্ব নেন। পরে মসজিদটি নির্মাণ করেন। বাংলা ভাষার প্রথম প্রস্তাবক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যুক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ধনবাড়ির বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী প্রায় ১১৫ বছর আগে এ মসজিদটি সম্প্রসারণ করে আধুনিক রূপ দেন। তিনি ১৯১১ সালের রংপুর অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে প্রথম সোচ্চার হয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
মসজিদের ভেতরের দেয়ালে কড়ি পাথরের লতাপাতা আঁকা অসংখ্য রঙিন নকশা। তাই কড়ি পাথরের মোজাইক করা প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এ মসজিদটি। দেয়ালের বাইরের অংশেও রয়েছে সিমেন্ট আর কড়ি পাথরের টেরাকোটা নকশা। ধনবাড়ী নওয়াব শাহি জামে মসজিদ প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপরে অবস্থিত। সংস্কারের আগে এটি ছিল আয়তাকার। তখন দৈর্ঘ্য ছিল ১৩.৭২ মিটার (৪৫ ফুট) এবং প্রস্থ ছিল ৪.৫৭ মিটার (১৫ ফুট)। মসজিদের ভেতরের দেয়ালে কড়ি পাথরের লতাপাতা আঁকা অসংখ্য রঙিন নকশা ও কড়ি পাথরের মোজাইক করা প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন পরিলক্ষিত হয় মসজিদটিতে। মসজিদটি দেয়ালের বাইরের অংশেও রয়েছে সিমেন্ট আর কড়ি পাথরের টোরাকাটা নকশা।
কিন্তু সংস্কারের পর রীতিমতো মসজিদের আকারই বদলে যায়। বর্তমানে এটি বর্গাকৃতির। কিন্তু সাধারণ তিন গম্বুজবিশিষ্ট আয়তাকৃতির মোগল মসজিদের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। সংস্কারের পর প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী কিছুটা লোপ পেলেও চাকচিক্য ও সৌন্দর্য বেড়েছে বহুগুণে। সুন্দর কারুকার্যময় এ মসজিদের পূর্বদিকে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানযুক্ত তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে সর্বমোট পাঁচটি প্রবেশ পথ রয়েছে। মসজিদটির চারদিক থেকে ৪টি প্রবেশপথ এবং ৯টি জানালা রয়েছে। গম্বুজ রয়েছে ছোট-বড় ৩৪টি। বড় ১০টি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ছাদ থেকে প্রায় ৩০ ফুট বেশি। দোতলার মিনারটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। মসজিদের ৫ ফুট উচ্চতা এবং ৩ ফুট প্রস্থের মেহরাবের সৌন্দর্য নজরকাড়া। সেখানে বসেই খুতবা পাঠ করেন ইমাম।
মসজিদটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো সুউচ্চ ৩০ ফুট উচ্চতার মিনারের চূড়ায় ১০টি তামার চাঁদ, যা মিনারের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়েছে। ভেতরের সংরক্ষিত কক্ষে শোভা পাচ্ছে ১৮টি হাড়িবাতি। যেগুলো নারিকেল তেল দিলে আলো দিত। রয়েছে মোগল আমলে ব্যবহৃত ৩টি ঝাড়বাতিও। মসজিদ নির্মাণে চুন, সুরকি, সাদা সিমেন্ট, কড়ি পাথর, লোহার খাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো ঘাট ও কবরস্থান। যেখানে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সমাধি। মসজিদের পাশে রয়েছে ৭ বিঘা আয়তনের বিশাল এক দীঘি। মসজিদের সংরক্ষিত কক্ষে শোভা পাচ্ছে ১৮টি হাড়িবাতি। যা নারিকের তৈল দ্বারা আলোর কাজে ব্যবহৃত হতো। রয়েছে মোঘল আমলে ব্যবহৃত ৩টি ঝাড়বাতিও।
বর্তমানে এটি একটি বর্গাকৃতির মসজিদ এবং সাধারণ তিনগম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকৃতির মোঘল মসজিদের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। সংস্কারের পর মসজিদের প্রাচীনত্ব কিছুটা লোপ পেলেও এর চাকচিক্য ও সৌন্দর্য অনেক বেড়েছে। সুন্দর কারুকার্যময় এ মসজিদের পূর্বদিকে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানযুক্ত তিনটি প্রবেশপথ, এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণে আরো একটি করে সর্বমোট পাঁচটি প্রবেশ পথ রয়েছে।
মসজিদের পাশে রয়েছে ৭ বিঘা আয়তনের এক বিশাল দীঘি। মৃত্যুর আগে এ স্টেট ওয়াকফ করে যান নওয়াব আলী। ওয়াকফকৃত সম্পদেই মসজিদ, এর পাশে অবস্থিত মাদ্রাসা ও ঈদগাহ পরিচালিত হয়ে আসছে। নবাব নওয়াব আলী মৃত্যুর আগে তার এ স্টেট ওয়াকফ করে যান। ওয়াকফকৃত সম্পদেই মসজিদ ও পাশে অবস্থিত মাদ্রাসা, ঈদগাহ ইত্যাদি পরিচালিত হয়ে আসছে। সুপ্রাচীন এ মসজিদটিতে একসঙ্গে ২০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাচীন আমলের মানুষের ইবাদত-বন্দেগি ও ইসলামি ঐতিহ্যের স্মৃতিচিহ্ন ধারণকারী ধনবাড়ি নওয়াব শাহী মসজিদটি ইসলামী ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী এবং সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।