গাছে গাছে লাল শিমুলে চোখ জুড়াচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল স্পেশাল বিনোদন লিড নিউজ

সাদ্দাম ইমন ॥
এই মাত্র ক’দিন হলো প্রকৃতিতে দখিনা হাওয়ার ঋতুরাজ বসন্ত ও ফাগুনের হাওয়া শেষ হয়েছে। ভ্রমর করছে খেলা। গাছে শিমুল আর পলাশের মিলন মেলা। ফাগুনে ঋতুরাজ বসন্ত সবেমাত্র শেষ হয়েছে। আর ফাল্গুনের হাত ধরে ঋতুরাজ বসন্তে প্রকৃতির বর্ণিল সাজে টাঙ্গাইলের প্রকৃতিপ্রেমীরা ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। টাঙ্গাইল জেলায় বসন্তে প্রকৃতির সাথে যুব-তরুণ-তরুণীদের মণে ও হৃদয়ে দেয় দোলা। কুসংস্কারকে ছুড়ে ফেলে সকল বিভেদ ভুলে নতুন প্রত্যয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ে প্রতিবার প্রকৃতিতে আসে ঋতুরাজ বসন্ত।
তাইতো কবি বলে গেছেন ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত’। সেই ফাগুনের টাল-মাতাল ফাল্গুনি হাওয়া দোলা দেয় বাংলার নির্সগিক প্রকৃতিতে। পুড়াতন ফেলে নতুন রূপে প্রকৃতি যেন সাজে ঋতুরাজ বসন্তে। আলতো বাতাসের দোল লাগতেই গাছ থেকে ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ে রাশি রাশি শুকনো পাতা। হালকা দমকা হাওয়ায় কিছুটা ঘূর্ণিপাকে নিচে পাতা পড়ার দৃশ্য দেখে অনেকের মনই উদাস হয়। শীতের পর ফাগুন শেষে এই দিনে গাছের ঝরাপাতা এখনো ঝরছে। এরই মধ্যে এসব ডালে ডালে নতুন পত্র-পল্লবে ছেয়ে যাচ্ছে। ফাগুনের শেষে সুবিন্যাস্ত বৃক্ষরাজি বেষ্টিত মেঠো পথে এখনো ঝরাপাতা গড়াগড়ি খায়। হেঁটে যাওয়ার সময় মর্মর শব্দে তাদের উপস্থিতি এখনো জানান দেয়। আর তখনই পাতাকুড়ানিরা শলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পাতাকুড়ানোর কাজে। গ্রামাঞ্চলে এ পাতা কুড়িয়ে সেই পাতা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
প্রকৃতির বসন্ত, প্রকৃততিপ্রেমী কবি ও ভাবুক মণ ব্যাকুল কড়া ফাগুনের আগুন ঝড়া বসন্ত। যৌবনের বসন্ত দারুন উদ্যমতা বয়ে আনে আনন্দ। উল্লাস-উচ্ছলতা। ভাবুক মণ কেড়ে নেয় মুহূর্তে। দোলা দেয় কবি-সাহিত্যিক মন-প্রাণ কেড়ে নেয়। আগুন ঝড়া ফাগুনের চির অম্লান বসন্ত। শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার, সংস্পর্শে ভাবুক মণে জাগ্রত হয় কবি মন। তাইতো কালের রাজা বসন্ত! মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দেয়। সত্যি সত্যি সে ঋতুরাজ। লাল-হলুদের বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়ে প্রকৃতির সাথে নিজেদের সাজিয়ে বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসে বাঙালি তরুণ-তরুণীরা। বসন্ত ফুলেল সাজে সজ্জিত হলেও পলাশ আর শিমুল ফুলের রঙকেই পোশাক-আসাকে পছন্দ তরুণ-তরুণীদের। খোঁপায় বাঁধে গাঁদাফুলের মালা। বসন্তের আনন্দঘণ পরিবেশ থেকে বাদ যায় না গ্রামীণজীবন। আম লিচুর মুকুলের সৌরভ-আর বাহারি পিঠাপুলি গ্রামে বসন্তের আমেজ হাজারো গুণ আনন্দ বাড়িয়ে দেয়। আগুন ঝড়া ফাগুনে বসন্তকে নেয় নিবিড়ভাবে বরণ করে। বছরব্যাপী প্রতীক্ষায় তরুণ-তরুণীদের মনে লাগে বসন্তের আমেজ। সাজ সাজ রব উঠে শহর-বন্দর গ্রামে। গাছে গাছে নতুন কঁচি পাতার দোলা দেয় প্রকৃতিতে।
কবি সাহিত্যিক মণে বাড়িয়ে দেয় মণ ভলানো আবেগ। নতুন প্রাণেও লাগে ফাগুনের পাগল করা হাওয়া। ঋতুরাজ বসন্ত প্রত্যেক হৃদয়বান মানুষকে করে স্বতেজ। তাই বসন্ত মানে তরুণ-তরুণী মনে-হৃদয়ে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার। বসন্তে শুধু পলাশ-শিমুলেই নয় রং ছড়ায় সব বয়সী মানষ মনে। বাংলার ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, শহীদদের রক্তরঙিন রক্তের স্মৃতিরও রং ছড়ায়। ৫২’র ভাষা আন্দোলনেও রয়েছে এর দারুন প্রভাব। আটই ফাল্গুণ। একুশের তারুণ্য তাইতো ভাষার জন্য দিয়েছে অগাতরে তরতাজা প্রাণ! তাই বাংলা পঞ্জিকাবর্ষের শেষ ঋতু বসন্তকে বাঙালি পালন করে ফাল্গুন-বসন্ত হিসেবে। বসন্তেই বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসব। এই উৎসব গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃতও বটে। বাংলায় বসন্ত উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। অথচ এই শুরর ঐতিহ্যবাহি ইতিহাস। সেই মোঘল সম্রাট আকবরই বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে ঘিরে ১৪ উৎসবের প্রবর্তন করেন। তার অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধারনা এখনকার মতো ছিল না। এর সাথে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বাঙালিসত্তা। সেই ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধারণ করে রাখতে পারলেই কেবল বসন্ত উৎসবের নতুন প্রজন্ম বাঙালি চেতনাকে উজ্জিবিত রাখবে নিঃসন্দেহে।

Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *