
হাবিবুর রহমান, মধুপুর ॥
টাঙ্গাইলের মধুপুরে গারোদের কৃষ্টি সংস্কৃতির ব্যবহার্য তৈজসপত্র ফিরিয়ে আনতে স্বপ্নের জাল বুনছেন গারো নারী চিত্রা নকরেক। প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের কৃষ্টি সংস্কৃতি আদি জিনিসগুলো তুলে ধরতে। বাহারি কারুকাজে নিপুণ নিখুঁত হাতে তৈরি করছেন বাঁশের ৫০ রকমের তৈজসপত্র। নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয় গারো কোচ নারী পুরুষেরও কর্মের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আর এ কাজটির নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গারো সম্প্রদায়ের উদ্যমী নারী চিত্রা নকরেক। চিত্রা নকরেকের বাড়ি মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ি ইউনিয়নের পীরগাছা গ্রামে।
চিত্রা নকরেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে ৬ বছর আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বাড়িতেই বিলুপ্ত প্রায় গারো কৃষ্টি সংস্কৃতির ব্যবহার্য বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। একটি কারখানাও গড়ে তুলেছে। মধুপুরের গারো পল্লীর ফুলবাগ চালা ইউনিয়নের পীরগাছা এলাকায়। তার কারখানার নাম দিয়েছে চিত্রা হেনরিকাপ্ট। এলাকা থেকে এ শিল্পের কাঁচামাল ঝাপা জাতীয় বাঁশ কিনে কারখানায় এনে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে কাজ করেন। তিনি আরো জানায়, কারখানায় তৈরী হচ্ছে গারোদের আদি ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি সংস্কৃতির বাঁশের তৈরি চুঙা, কুলা, টংঘর, কথথপ, ফুলদানি, ডাস্টবিন, ওয়াল মেট, শোপিচ, ল্যাম্প বাতির বক্স, আদি হ্যাজাক বাতির বক্স, গারো মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী নাচের কুলা, নাচের থুরাসহ প্রায় ৫০ ধরনের শৌখিন নানা তৈজসপত্র।
স্থানীয় ১৫-২০ জন গারো কোচ নারী পুরুষ চুক্তিতে তৈরি করেন প্রায় ৫০ ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র। কারখানার কাজ করা নারী শ্রমিকরা জানান, কারখানার কাজ করে নারী শ্রমিকরা মাসে উপার্জন করছে মাসে ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। সংসারের কাজের পাশাপাশি এখানে কাজ করে যা পান তা দিয়ে স্বামীর উপার্জনের সাথে যোগ করে ভালোই চলছে তাদের পরিবার পরিজন। ৬ বছর আগে প্রশিক্ষণ নিলেও অর্থসংকটে কারখানা করতে পারছিলেন না তিনি। ৩ বছর আগে ছোট পরিসরে কারখানা খুলেন তিনি। তার কারখানার তৈরী জিনিসপত্র দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মেটাচ্ছে। তাই সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা চান নারী উদ্যোক্তা চিত্রা নকরেক।
জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, চিত্রা নকরেক বাঁশের বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র তৈরি করে যাচ্ছে। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চিত্রা নকরেকের মাধ্যমেই গারো সম্প্রদায়ের বিলুপ্তি প্রায় অনেক ব্যবহার্য জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব মনে করেন তিনি।
মধুপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আনজুম পিয়া বলেন, তার কারখানায় তিনি কয়েকবার ঘুরে এসেছে। একজন আত্মবিশ্বাসী নারী হিসেবে চিত্রা নকরেক নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয় আরো নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তার তৈরি পন্য দেশের বাইরেও যাচ্ছে। সে অন্যান্য নারীদের জন্য অনুকরণীয় বলেও তিনি জানান। মাতৃতান্ত্রিকতা আত্মপ্রত্যয়ী দৃঢ় মনোবলের কারণে সে এগিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।