
স্টাফ রিপোর্টার ॥
বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির ঋতুরাজ বসন্তের শেষার্ধে রক্তরঙা পলাশ-শিমুল আপন মহিমা তুলে ধরেছে। এরই অংশ হিসেবে টাঙ্গাইল এলজিইডি ভবনে পলাশ ফুলের রঙিন আভা দ্যূতি ছড়াচ্ছে আঙিনা জুড়ে। লাল-কমলা মিশ্রিত উজ্জ্বল রঙের এই ফুল যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব শিল্পকর্ম। চারদিকে বসন্তের আমেজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এলজিইডি চত্বরে রোপিত গাছে ফুটে থাকা পলাশ ফুল পরিবেশে এক অন্যন্য সৌন্দর্য যোগ করেছে।
জানা গেছে, টাঙ্গাইল এলজিইডি চত্বরে বেশ কিছু বছর আগে পলাশ গাছ রোপণ করা হয়। সঠিক পরিচর্যার ফলে এখন ওই গাছটি পরিপূর্ণ বিকশিত হয়েছে এবং প্রতি বছর বসন্তকালে দৃষ্টিনন্দন দ্যূতি মেলে ধরছে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে গাছের ডালপালায় পাতা কমে গিয়ে শুধু লাল-কমলা ফুলে ছেয়ে যায়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় গাছে যেন আগুনের শিখা দোল খাচ্ছে। পলাশ ফুল ঋতুরাজ বসন্তের অন্যতম প্রতীক। এ ফুল শুধু প্রকৃতির নয়, বাঙালির সংস্কৃতি ও কাব্যেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। কবি-সাহিত্যিকদের রচনায় পলাশের সৌন্দর্য উঠে এসেছে বারবার। বসন্ত এলেই পলাশ ফুলের সৌন্দর্য দেখে মন ভরে যায়, আর প্রকৃতি যেন নতুন রূপে সেজে ওঠে।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রতিদিন প্রকৃতিপ্রেমী, ফটোগ্রাফার এবং সাধারণ পথচারীরা এলজিইডি চত্বরে আসেন পলাশ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কেউ ছবি তোলেন, কেউবা ভিডিও ধারণ করেন। সকাল-বিকাল বিভিন্ন বয়সের মানুষ এখানে এসে পলাশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। টাঙ্গাইল এলজিইডি চত্বরে পলাশসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ রোপণের ফলে এটি এখন একটি পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক স্থান হয়ে উঠেছে। শুধু সৌন্দর্যই নয়, এই সবুজায়ন প্রকল্প জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে। নানা প্রজাতির গাছগুলো এলাকার উষ্ণতা কমাতে সাহায্য করছে এবং স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পলাশ (Butea monosperma) গাছের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলো এর উজ্জ্বল লাল-কমলা রঙের ফুল। এই গাছ বসন্তের শেষদিকে পত্রশূন্য হয়ে ফুলে ফুলে ভরে যায়। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, গাছের শাখাগুলো যেন আগুনের শিখা ধারণ করেছে। তাই একে ‘আগুন ফুল’ নামেও ডাকা হয়। পলাশ গাছের উচ্চতা সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত হয়, আর এর ফুল তিনটি পাঁপড়ি নিয়ে গঠিত হয়। বসন্তের শেষে এই ফুল ফোটে- যা গ্রীষ্মের শুরুর দিক পর্যন্ত টিকে থাকে। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসের সন্ধিক্ষণে- যখন শীত বিদায় নেয় এবং গ্রীষ্মের আগমন ঘটে, তখন প্রকৃতিতে এক নতুন প্রাণসঞ্চার হয়। অন্যান্য গাছে যখন সবুজ পত্রপল্লবের আধিক্য দেখা যায়, তখনই পলাশ তার লাল-কমলা ফুলের আবরণে প্রকৃতিকে আরও মোহনীয় করে তোলে। বিশেষ করে গ্রামবাংলার মাঠ, পাহাড়ি অঞ্চল ও শুকনো বনভূমিগুলোতে পলাশের উজ্জ্বল উপস্থিতি প্রকৃতির রঙিন উৎসবের আবহ তৈরি করে। ইট-সিমেন্টের খটখটে এলজিইডি চত্বরেও রোপিত পলাশ প্রকৃতির অমিয়লীলায় অংশ নিচ্ছে ফুলের সৌন্দর্য বিলিয়ে। পলাশ গাছ শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি একটি ঔষধিগুণ সম্পন্ন গাছ, যার বাকল, ফুল ও বীজ আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি পলাশ গাছ মাটির ক্ষয়রোধ করে এবং শুষ্ক বনাঞ্চলের প্রতিবেশ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এলজিইডি চত্বরে নিয়মিত আসা এক দর্শনার্থী বলেন, প্রতিবার বসন্তে এখানে এসে পলাশ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি। প্রকৃতির এত সুন্দর রঙের খেলা দেখে মন ভালো হয়ে যায়। স্থানীয় পরিবেশবিদদের মতে, এ ধরনের উদ্যোগ যদি শহরের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও নেওয়া হয়, তবে পরিবেশের জন্য তা হবে অত্যন্ত ইতিবাচক। পরিবেশবিদরা মনে করেন, যদিও পলাশ ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে। তবে দুঃখজনকভাবে দিন দিন পলাশ গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। নগরায়ন ও বন উজাড়ের ফলে এই গাছ সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সরকার ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে আরও সচেতন হয়ে এই গাছ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে হবে। যাতে ভবিষ্যতেও বসন্তে পলাশ ফুলের রঙিন শোভা উপভোগ করা যায়।
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, ভবন চত্বরে পলাশ ফুলের সৌন্দর্য এক অন্যন্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যা প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে বসন্তের আনন্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ ধরনের সবুজায়ন কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হলে পরিবেশের জন্য যেমন উপকারী হবে। তেমনি ভবিষ্যতেও আমরা বসন্তের রঙিন ছোঁয়া উপভোগ করতে পারব।