
হাবিবুর রহমান, ধনবাড়ি ঘুরে এসে ॥
টাঙ্গাইলের ধনবাড়িতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জৈবিক উপায়ে বিষমুক্ত চাষ। বাড়ির আঙিনায় জৈব সার তৈরি করে ভেষজ বালাই নাশকের মাধ্যমে চাষ হচ্ছে সবজি, ফলমূল, পুষ্টিবাগানসহ নানা ফসল। জৈবিক উপায়ে এ চাষ পদ্ধতিতে পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি একটি বাড়িই যেন একটি খামারের মতো। ফসলের মাঠে বাড়ছে জৈবিক ফসলের চাষ। মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে বাহারি রকমের সবজি। বাড়ির আঙিনা থেকে ফসলের মাঠেও এ চাষে এগিয়ে আসছে। কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদেরকে জৈবিক উপায়ে চাষাবাদ বাড়তে উদ্বুদ্ধ করতে তারা কাজ করছে। কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকে কৃষি বিভাগ।
ধনবাড়ি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে করলা, জিঙা, চিচিঙ্গা, শসাসহ নানা কৃষি ফসল চাষ হচ্ছে। বিষ বা রাসায়নিক ব্যবহার রোধে কৃষকদের হলুদ আঠাঁলো ফাঁদ ও সেক্সফেরোমন ব্যবহার করা হচ্ছে। জমিতে জৈব সার ব্যবহারও বেড়েছে। নিরাপদ সবজি চাষে দিন দিন কৃষকরা এগিয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে ধনবাড়ির মুশুদ্দি গ্রামে গিয়ে জানা দেখা, নিরাপদ সবজি চাষের দৃশ্য। কৃষকরা জানালেন তাদের জৈবিক ফসল চাষের গল্প। মুশুদ্দি মুলত সাত পাড়া। পুরো গ্রামটিই যেন সবজি বাগান। অনেকেই এ গ্রামকে সবজির গ্রামও বলে থাকে। খন্দকার পাড়া গিয়ে কথা হয় আল আমিন (৫০) এর সাথে। তিনি একজন নিরাপদ সবজি চাষি। সারা বছর সবজি করে। বাড়িতে তৈরি কম্পোস্ট গোবর সার জমিতে দেন। বালাইনাশক হিসেবে সবজির জমিতে দিয়েছে হলুদ আঠাঁলো ফাঁদ। ব্যবহার করছে সেক্সফেরোমন। একই জমিতে আলু চাষ করা কালেই জমিতে রোপন করেছিল করলা। মাঁচা করে দিয়ে ছিল। আলু তোলার পর করলাও পান। এখন একই মাঁচায় ধুন্দল দিয়েছে। তার মতে, বছরে এক জমিতেই ৫/৬ বার ফসল বা সবজি করতে পারে।
কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তাদের এলাকায় প্রচুর পরিমানে সবজি চাষ হয়। তিনি সারা বছর সবজি চাষ করে। তাদের গ্রামের সবজি নিরাপদ। কোন বিষ প্রয়োগ করে না। এতে তাদের খরচও কম হয়। তার মতে, নিরাপদ সবজির বাজার হলে তারা ভালো দাম পেতো বলেও তার ধারনা। রোজিনা বেগম জানালেন, নারীরাও পুরুষদের পাশাপাশি মাঠে কাজ করে। নিড়ানী, সারা, সবজি তোলাসহ নানা কাজে তারা সহযোগিতা করে থাকে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ জানান, তারা মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ এলাকায় নিরাপদ সবজি করে কৃষকরা এগিয়ে যাচ্ছে। কম খরচে ক্ষতিকর বিষ প্রয়োগের পরিবর্তে আফাঁরো ফাঁদ ও সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে। জৈবিক চাষের ফলে এ এলাকার ভাবমূর্তিও বাড়ছে। তিনি নিরাপদ সবজির বাজার করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে ধনবাড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনায় জৈব কম্পোস্ট সার তৈরি করে চাষ করেছেন ফল, শাক সবজি। পরিবারের বিষমুক্ত পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। ধনবাড়িতে জৈবিক বিষমুক্ত চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য কাজ করছে কৃষি বিভাগও। এ সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। তার মতে, নিরাপদ সবজি চাষ এখন ধনবাড়িতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।