স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিরোধপূর্ণ দুই ঈদ গাঁহসহ আড়াই শতাধিক মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিরোধপূর্ণ পক্ষের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ.বি.এম আরিফুল ইসলাম কয়েক দাফায় বৈঠক করেন। এতে অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই মাঠ দুটিতে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া প্রশাসনের নজরদারিতে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় আড়াই শতাধিক মসজিদ ও খোলা মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে উপজেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উপজেলার তরফপুর ইউনিয়নের পাথরঘাটা দাখিল মাদরাসা ঈদ গাঁহ মাঠে ঈদের জামাতে মোনাজাত করার পক্ষে বিপক্ষে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়। এক গ্রুপ নামাজ শেষে মোনাজাত করার পক্ষে এবং অপর পক্ষ মোনাজাত করার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এতে করে ঈদের জামাতের প্যান্ডেল করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ নিয়ে থানা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনার পর ইউএনও এ.বি.এম আরিফুল ইসলাম দুই পক্ষের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেন। এতে মির্জাপুর সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর শাহিন কবির শুভ, মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন, তরফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজ রেজাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সিদ্ধান্ত হয় ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) একই প্যান্ডেলের নীচে মোনাজাতের বিপক্ষের দল সকাল সাড়ে সাতটায় এবং পক্ষের দল সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত আদায় করবেন। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত দুই পক্ষ মেনে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদের জামাত আদায় করেন।
অন্যদিকে উপজেলার ওয়ার্শী ইউনিয়নের আগনিলজা জামে মসজিদের জমি সংক্রান্ত জটিলতায় দুই গ্রুপের মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থা দেখা দেয়। দুই গ্রুপের কোন গ্রুপ ঈদের মাঠে কথা বলবেন এবং মাঠে মুসুল্লীদের দেয়া টাকা জমা রাখবেন। এ নিয়ে মতপার্থক্য চরম আকার ধারণ করে। এতে ঈদের জামাত আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এমন অভিযোগ পেয়ে ইউএনও এ.বি.এম আরিফুল ইসলাম ঈদের আগের দিন রোববার (৩০ মার্চ) দুই পক্ষ নিয়ে বৈঠক করেন। পরে দুই পক্ষের বাইরে ইউএনও’র প্রতিনিধি হিসেবে ওই ইউনিয়নে বিট পুলিশের দায়িত্বে থাকা মির্জাপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নেছার উদ্দিনকে ঈদের মাঠের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি দুই পক্ষের হয়ে ঈদের মাঠে কথা বলবেন এবং মুসুল্লিদের দেয়া টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা দিবেন। ইউএনওর এই সিদ্ধান্ত দুই পক্ষ মেনে নেয়ায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়ায় সোমবার (৩১ মার্চ) সকালে আনন্দমুখর পরিবেশে ঈদের জামাত সম্পন্ন হয়।
বিরোধপূর্ণ ওই দুইটি ঈদের জামাতসহ উপজেলার প্রায় আড়াই শতাধিক ঈদের মাঠে উৎসবরমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ জামাত সম্পন্ন হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী ও সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বরত সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন উপজেলার সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীরা।
আগনিলজা জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ ইসমাইল হোসেন বলেন, ইউএনওর দিক নির্দেশনায় আমাদের মসজিদের দীর্ঘদিনের বিরোধ মীমাংসা হয়েছে। এতে অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়া ঈদের জামাত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তরফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজ রেজা বলেন, পাথরঘাটা মাদরাসা ঈদগা মাঠে মোনাজাতের পক্ষে বিপক্ষে গ্রুপ তৈরি হয়ে ঈদের জামাত আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী ও সেনা ক্যাম্পের হস্তক্ষেপে শান্তিপূর্ণ ভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে আটটায় উপজেলা প্রশাসন মসজিদে ইউএনওসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঈদের নামাজ আদায় করেন। ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল ঈদগাহ মাঠে সাবেক এমপি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী ও মির্জাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ সোহরাব ঈদের নামাজ আদায় করেন।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) এ.বি.এম আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের সকলস্তরের সহযোগিতায় বিরোধপূর্ণ দুটি ঈদ গাঁ মাঠসহ উপজেলার প্রায় আড়াই শতাধিক ঈদের মাঠে শান্তিপূর্ণভাবে জামাত সম্পন্ন হয়েছে। এতে দায়িত্ব পালনকারী সকল পক্ষ ও মুসুল্লিদের ধন্যবাদ জানাই।