
সোহেল রানা, কালিহাতী ॥
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে পাট চাষীদের প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্ধকৃত একটি অংশের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বুধবার (৯ এপ্রিল) দিনব্যাপী উপজেলা পরিষদের হলরুমে ৭৫ জন চাষী নিয়ে এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণে চাষীদের জন্য সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের বরাদ্দ টাকা থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাটচাষীরা দোষীদের বিচারের দাবি করেন।
তবে জেলার পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার দাবি- তিনি বরাদ্দকৃত সকল টাকা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন। তবে উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ফারুকুজ্জামান বরাদ্দকৃত টাকার নেয়ার ব্যাপারে তিনি অস্বীকার করেছেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
জানা যায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ আওতায় তালিকাভুক্ত পাট উৎপাদন চাষীদের নিয়ে বুধবার (৯ এপ্রিল) কালিহাতী উপজেলা পরিষদ হলরুমে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এতে উপজেলার ৭৫ জন পাট চাষী অংশগ্রহণ করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাইরুল ইসলাম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাট চাষী প্রশিক্ষণে পাট চাষীদের সম্মানী ভাতা, নাস্তা ও দুপুরের খাওয়ার জন্য ৬৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রশিক্ষণে সকালের নাস্তার জন্য ৮০ টাকা, দুপুরের খাবার জন্য ৩শ’ টাকার বরাদ্দ ছিলো। কিন্তু সকালের নাস্তার জন্য ৪০ টাকা এবং দুপুরের খাবারের জন্য ১৫০ টাকা খরচ করা হয়েছে চাষীদের জন্য। এতে মোট ১৪ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে পাট চাষীরা বলেন, সকালের নাস্তায় ৫ টাকা মূল্যের ২টি করে লেক্সাস বিস্কুট, একটি করে সমচা ও একটি করে মিষ্টি পেয়েছেন। যার সর্বোচ্চ মূল্য ৪০ টাকা। এছাড়াও দুপুরের খাবার পেয়েছেন এক প্যাকেট করে মোরগ পোলাও, যার মূল্য ১৫০ টাকা। চাষী আবু সোমা বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ করেছি। সকালে ও দুপুরের নাস্তার জন্য সর্বোচ্চ ১৯০ টাকা হয়েছে। দুপুরে ও সকালের নাস্তার জন্য ৩৮০ টাকা বরাদ্দ সর্ম্পকে আমরা জানি না। আরেক চাষী আবু সাঈদ বলেন, সকালে নাস্তা ও দুপুরের প্যাকেট খাওয়ার সাথে কোন পানি দেয়া হয়নি। যারা আমাদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাদের বিচার চাই।
কালিহাতী নবাব বিরিয়ানি হাউজে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, কালিহাতী পাট অধিদপ্তর থেকে মোরগ পোলাও নেয়া হয়েছে। যার প্রতি প্যাকেটের দাম পড়েছে ১৫০ টাকা করে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সিদ্দিকী বলেন, আমি কোন খাবার আনিনি। খাবারসহ বরাদ্দকৃত সকল টাকা উপ-সহকারীর কাছে দিয়েছি। তবে খাবারের ৩৮০ টাকা থেকে আয়কর ও ভ্যাটের জন্য ২০% বাদ যাবে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, সকালের নাস্তার জন্য ৬০ টাকা এবং দুপুরের মোরগ পোলাওয়ের জন্য ২২০ টাকার খাবার হয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে।
এদিকে কালিহাতী উপজেলার উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ফারুকুজ্জামান বরাদ্দকৃত টাকার নেয়ার ব্যাপারে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সিদ্দিকী আমাদের অফিসের কম্পিউটার অপারেটর তার ভাতিজা হওয়ার সুবাদে তাকে দিয়ে সব কিছু করিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম বলেন, উনাদের আমার অফিসে আসতে বলা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।