
কাজল আর্য ॥
বাবা মারা যাওয়ার ৯ ঘন্টা পর ছেলের জন্ম। প্রথম সন্তানের মুখটি দেখার জন্যই কর্মস্থল থেকে রওনা হয়েছিলেন পুলিশ কনস্টেবল রনি শিকদার (২৬)। অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! নবজাতক ছেলে হয়ে গেল এতিম। আর বাবা চলে গেলেন পর পারে।
ঈদের পরদিন মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রনি শিকদার গাজীপুর থেকে মোটরসাইকেলযোগে টাঙ্গাইলে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অটোরিকশার ধাক্কায় বেলা ১১ টায় মারা যান তিনি। সন্তান হবে এজন্যই তিনি ঈদের পরে ছুটি নিয়েছিলেন।
নিহত পুলিশ কনস্টেবল রনি শিকদারের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ছোনাট গ্রামে গিয়ে দেখা যায় করুণ দৃশ্য। বাড়িসহ পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম। রনির মা রিনা বেগম একমাত্র ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সারাদিন বিলাপ করছেন। তাকে স্যালাইন পুশ করে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
রনির স্ত্রী সুমি আক্তার টাঙ্গাইল শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাত ৮ টায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় সুমি তার নবজাতক ছেলেকে কোলে নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন। স্বামীর শোকে তিনি পাথর হয়ে গেছেন। বাবাহারা ছেলে ও তার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে একেবারে দিশেহারা তিনি ?
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফলদার মেয়ে সুমি আক্তার ও রনি শিকদার সম্পর্কে খালাতো বোন। ৪ বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। অনেক সাধনার পরে সুমির কোল জুড়ে আসবে সন্তান। এতে তাদের পরিবারের বয়ে যায় আনন্দের জোয়ার। কিন্তু একই দিন ছেলের জন্মের আগে পিতার মৃত্যুতে তাদের আকাশ বাতাস ভারি হয়ে গেছে। প্রতিবেশি দেরোয়ার হোসেন ও মোবারক আলী বলেন, রনি ভাল ছেলে ছিল। কারো সাথে কখনো ওর ঝগড়া বিবাদ হতো না। বাড়িতে আসলে আমাদের খোঁজখবর নিতো। ছেলের জন্মের মাত্র ১ ঘন্টা পর স্থানীয় কবরস্থানে আমরা রনিকে দাফন করি। এর থেকে বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে! কারো ভাগ্যে যেনো এরকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা না হয়।
ছেলের মৃত্যুতে রনির বাবা জামাল হোসেনের চোখ ছলছল। মা বিলাপ করে বলছেন, আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমি এখন কিভাবে থাকব। হাসপাতালের ক্লিনিকে সুমি আক্তার ফুফিয়ে কান্না করছেন। খেতে পারছেন না কিছু। অষ্পষ্ট কণ্ঠে বলছেন, বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগেও আমার সাথে ফোনে কথা হয়েছে রনির। ছেলে ও আমাকে এখন কে দেখবে। আমরা কিভাবে বাকি জীবন চালাবো। সুমি আক্তার সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতার অনুরোধ করেছেন।