
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে একটি গরুর হাটের খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে সাবেক ও বর্তমান ইজারাদারের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় যৌথবাহিনী মোতায়েন করা হয়। শনিবার (১৯ এপ্রিল) উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের কাইতলা গরুর হাটে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী অবস্থান করে।
এ সময় মির্জাপুর সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন মেজর ফাহিম, দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিনসহ বিপুল সংখ্যক সেনা ও পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক শরীফা হকের নির্দেশে হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তায় যৌথবাহিনী মোতায়েন করা হয় বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ.বি.এম আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য সরকারী বিধি মোতাবেক কাইতলা গরুর হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। একাধিক ইজারাদার দরপত্র ক্রয় করে জমা দেন। কিন্তু গত ১৪৩১ বাংলা সনের ইজারাদার হেলাল উদ্দিন নতুন বছরের ইজারা ও খাজনা আদায় স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলন সংগ্রামের কারণে তিনি কয়েক হাটের খাজনা আদায় করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েন। সেজন্য তিনি ৬ মাসের স্থিতিবস্থা চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন বলে জানান। তাঁর আদেশের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ৬ মাসের জন্য স্থিতিবস্থার আদেশ দেন।
এদিকে স্থিতিবস্থা বাতিল চেয়ে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী হাই কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন। আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ বাতিল করেন দরপত্র কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগের নির্দেশ ও টাঙ্গাইল জেলা জজ কোর্টের অতিরিক্ত জিপির মতমত নিয়ে গত (২৪ মার্চ) জমাকৃত দরপত্র উন্মুক্ত করে উপজেলা প্রশাসন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বেলতৈল গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান হাটের নতুন ইজারাদার মনোনীত হন। ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য তিনি ভ্যাট ও ট্যাক্্রসহ ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকায় গরুর হাট ইজারাদার হিসেবে মনোনীত হন।
তিনি শনিবার (১৯ এপ্রিল) হাট বুঝে নিয়ে নতুন বছরের প্রথম হাটের খাজনা উত্তোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। অন্যদিকে সাবেক ইজারাদার হেলাল উদ্দিন হাটের ইজারা বাতিল চেয়ে পুণরায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা-১ এ অভিযোগ করে নিজেকে হাটের বৈধ ইজারাদার হিসেবে দাবি করে দখল না ছেড়ে তিনিও হাটে খাজনা আদায়ের ঘোষণা দেন। সাবেক ও বর্তমান ইজারাদার দু’জনে হাটে খাজনা উত্তোলনের ঘোষণায় সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়।
এদিকে সংঘর্ষ এড়িয়ে নতুন ঠিকাদারকে হাটের দখল বুঝিয়ে দিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে হাটে যৌথবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবে ঘোষণা দিলেও সাবেক ইজারাদার হাটে না আসায় দিনভর হাটের পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। সকালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন ইজারাদারকে হাটের দখল বুঝে দিলে নতুন ইজারাদার খাজনা আদায় করেছেন।
সাবেক ইজারাদার হেলাল উদ্দিন বলেন, ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলন সংগ্রামের কারণে কয়েক মাস গরুর হাটের খাজনা আদায় করতে না পারায় তিনি আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। সেজন্য তিনি ৬ মাসের স্থিতিবস্থা চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। পিটিশন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই হাট নতুন করে ইজারা দেওয়া সুযোগ না থাকলেও প্রশাসন নতুন করে হাট ইজারা দিয়ে তার সঙ্গে অবিচার করেছেন বলে জানান।
বর্তমান ইজারাদার মাসুদুর রহমান বলেন, সরকারি নিয়ম কানুন মেনেই তিনি হাটের ইজারাদার হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। সাবেক ইজাদার হাটের দখল না ছেড়ে খাজনা আদায়ে বাঁধা দেয়ার পরিকল্পনা করায় তিনি প্রশাসনের কাছের লিখিত সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। প্রশাসনের সহায়তায় হাটের দখল বুঝে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে হাটের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমান বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক নতুন ইজারাদার নিযুক্ত হয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে হাটের দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়। তিনি দিনভর খাজনা আদায় করেছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ.বি.এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারের বিধি বিধান মেনে কাইতলা গরুর হাটের ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। নতুন ইজারাদার নতুন বছরের প্রথম হাটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খাজনা আদায় করেছেন। এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।