সাদ্দাম ইমন ॥
অস্থির হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের বাজার। বাড়তে শুরু করেছে জিনিসপত্রের দাম। পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল ও সবজির দাম বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। এছাড়া এ সপ্তাহে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ১৪ টাকা। আর বেশ আগে থেকে চড়া রয়েছে চালের দাম। সবমিলিয়ে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য এখন বাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম অস্বস্তিদায়ক। হুট করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়ায় তাদের সংসার খরচ বেড়েছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন বাজার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ ও তেলের দাম বাড়লেও ঈদের আগে উত্তাপ ছড়ানো মুরগির বাজারে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। সবজির বাজারও গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমতির দিকে রয়েছে। ডিমের দামও আগের মতো কম।
এদিকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার মৌসুমে বেশ কম দর ছিল পেঁয়াজের। ফলন ভালো হওয়ায় দেশী পেঁয়াজের কেজি সর্বনিম্ন ৩০ টাকায় নেমেছিল। এরপর কিছুটা বেড়ে ঈদের পরও ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দর উঠেছে ৬০-৬৫ টাকায়। ঈদের পর প্রায় প্রতিদিন পাইকারি বাজারে একটু একটু করে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সব হিসাবে নিলে, গত দুই সপ্তাহে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা বেড়েছে। এখন পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়।
এদিকে, গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) থেকে বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বেড়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১৮৯ টাকা, যা আগে ছিল ১৭৫ টাকা। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২২ টাকা, যা ছিল ৮৫২ টাকা। বোতলজাত তেলের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম হবে প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা, যা ছিল ১৫৭ টাকা।
কাঁচামালের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে সরবরাহ বাড়ছে। আগামী সপ্তাহে সবজির দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে সজনে ১৪০ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা আম কেজিতে ২০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। কাঁচামরিচ মিলছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
বাজারে শীতকালীন সবজি শিম ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে ও প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। তবে পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারে লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়, ধনে পাতা ১৪০ টাকা কেজিতে, কাঁচাকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এছাড়া ক্যাপসিকাম ১৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের চাল কুমড়া মিলছে প্রতিটি ৬০ টাকায়।
বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা আঁটি, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা আঁটি, কলমি শাক ৩ আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা আঁটি এবং ডাঁটা শাক দুই আঁটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বাজারগুলোতে সোনালি কক মুরগি ২৮০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ২৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে প্রতিকেজি ৮৫ থেকে ৯৮ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৮ থেকে ৯২ টাকা, স্বর্ণা ৫৮ টাকা এবং আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।
মাছের বাজারে দেখা গেছে, ৫০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ মাছ ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছের মধ্যে এক কেজি চাষের শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশী মাগুর ৮০০ থেকে হাজার টাকায়, মৃগেল ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষের পাঙাশের কেজি মিলছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, বোয়াল প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কৈ মাছ (চাষের) ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৬০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, চাষের টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রুপচাঁদা পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া বড় বাইম মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, শোল মাছ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কোরাল মাছ ৮০০ টাকা কেজি দরে মিলছে। ছোট মাছের মধ্যে কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকা, কাজলি বইচা ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর গোশত কেজি প্রতি ৭৫০ টাকায়, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার গোশত ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির গোশত কেজি প্রতি ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশী মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।