
মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল ॥
‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ এই ঐতিহাসিক আহ্বান শ্রমজীবী মানুষের চিরকালীন মুক্তির সংগ্রাম ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। মে দিবস কেবল শ্রমিকদের অধিকারের জন্য একটি দিবস নয়; এটি শ্রমিক শ্রেণির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম এবং ন্যায্যতার প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশেও মে দিবসের তাৎপর্য গভীর এবং আবেগময়। এখানে শ্রমিক আন্দোলন, শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, রাষ্ট্রীয় নীতির পরিবর্তন এবং সমসাময়িক চ্যালেঞ্জের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছিলেন। শান্তিপূর্ণ মিছিলের পর পুলিশের গুলিতে বহু শ্রমিক প্রাণ হারান। ওই ঘটনা বিশ্ব বিবেককে দারুণভাবে নাড়া দেয়। নিহত শ্রমিকদের স্মরণে ১৮৮৯ সালের প্যারিস সম্মেলনে বিশ্ব সমাজ মে দিবসকে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন- ‘The history of all hitherto existing society is the history of class struggles.’ (সব বিদ্যমান সমাজের ইতিহাসই শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস)। এই শ্রেণি সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে মে দিবস।
নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়ে ঘেরা এ ব-দ্বীপে শ্রমিক আন্দোলনের সূচনা ঘটে ঔপনিবেশিক শাসনামলেই। ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং পরে গড়ে ওঠা পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন শ্রমিকদের সংগঠিত করে। ১৯৫০-এর দশকে পূর্ব পাকিস্তানে জুট মিল, চিনি কারখানা, বস্ত্রকল, রেলওয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধানেও শ্রমিকের অধিকার সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। বাংলাদেশ সরকার মে দিবসের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৭২ সালে। বাংলাদেশের সংবিধানের ২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘কাজ শ্রমের মর্যাদা থাকবে এবং প্রত্যেক নাগরিকের কাজের সুযোগ ও ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা থাকবে।’ সরকার মে দিবসকে সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে। রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি উদযাপন শুরু হয়। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, বামপন্থী দল এবং বিভিন্ন সংস্থা র্যালি, আলোচনা সভা এবং সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে।
গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেওয়ায় ওই আন্দোলনকে ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই শ্রমিক আন্দোলনের কথা প্রায় ভুলেই গেছে। অথচ ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিক আন্দোলন এবং ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলন- এ দুটিরই মূল স্পিরিট প্রায় একই। পার্থক্য শুধুমাত্র ভৌগলিক। বাংলাদেশের শ্রমিক মুক্তি সংগ্রামের অগ্রদূত হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১৯৭২ সালের ‘জুলাই আন্দোলন’কে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে প্রবল অসন্তোষ দেখা দেয়।
১৯৭২ সালের জুলাই মাসে জাতীয় পর্যায়ে শ্রমিকরা বৃহৎ আন্দোলনে জড়িত হন। এই আন্দোলন ইতিহাসে ‘জুলাই আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি, শ্রমিক-নিয়ন্ত্রিত উৎপাদন ব্যবস্থাপনা এবং শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি তুলে ধরেন। জুলাই আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল- (ক) রাজনৈতিক চেতনা: শুধু অর্থনৈতিক দাবি নয়, রাষ্ট্র কাঠামোতে শ্রমিক শ্রেণির সক্রিয় অংশগ্রহণের দাবি। (খ) অর্থনৈতিক মুক্তি: উৎপাদন ব্যবস্থার উপর শ্রমিক শ্রেণির নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার চেষ্টা। (গ) সামাজিক ন্যায়বিচার: শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণের আকাঙ্খা। ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই সারা দেশে হাজার হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দেন। ৩৫ দফা দাবি পেশ করা হয়- যার মধ্যে শ্রমিক নিয়ন্ত্রিত শিল্প পরিচালনা, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা ছিল অন্যতম। তৎকালীন বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ শিল্প শ্রমিক এই আন্দোলনের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। আন্দোলনের প্রভাবে ১৯৭৪ সালে শ্রমনীতি প্রণীত হয় এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়।
শ্রমজীবী মানুষের ইতিহাস মানেই এক দীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। এই ইতিহাসের দুই অনন্য মাইলফলক হলো আন্তর্জাতিক মে দিবস এবং বাংলাদেশের গৌরবময় জুলাই আন্দোলন। মে দিবস বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ঐক্যের ডাক আর জুলাই আন্দোলন জাতীয় শ্রমিক মুক্তির সংগ্রাম- উভয়ই আজও প্রাসঙ্গিক এবং শ্রমিক সমাজের সামনে অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে আছে। আজকের বিশ্বায়িত অর্থনীতিতে শ্রমিকরা নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। গিগ ইকোনমি (উবার, ফুডপান্ডা, পাঠাও ইত্যাদি) শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তাহীন কর্মপরিবেশ তৈরি করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও অটোমেশনের যুগে শ্রমিক অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ অবস্থায় মে দিবস ও জুলাই আন্দোলনের শিক্ষা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- (১) সংগঠন ছাড়া শ্রমিক মুক্তি সম্ভব নয় (২) অধিকার আদায়ে আত্মনির্ভরতা ও সংগ্রাম অপরিহার্য এবং (৩) আধুনিক শ্রমিক আন্দোলনকে প্রযুক্তিনির্ভর ও কৌশলগত হতে হবে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ‘জুলাই আন্দোলন’ শুধুমাত্র গণঅভ্যুত্থানেই থেমে থাকেনি। এ আন্দোলন মহান মে দিবস ও ১৯৭২ এর জুলাই আন্দোলনের সংগ্রামী চেতনারই আধুনিক প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল। মূলত দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, মজুরি সহ সর্বস্তরে বৈষম্য, বেকারত্ব, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শ্রমিক, ছাত্র, কৃষক ও সাধারণ জনগণ একত্রিত হয়ে এক গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ গণআন্দোলন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিশেষ মোড় নেয়। সরকারি নীতির ব্যর্থতা ও দুর্নীতির অভিযোগে শ্রমিকরা, ছাত্ররা এবং বেকার যুবকরা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত রাস্তায় নেমে আসে। ঢাকার আশেপাশের গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরে ধর্মঘট ও রাস্তায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
তাঁরা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। ২০২৪ এর জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে অগ্রগণ্য, বিষেশ করে ছাত্রীদের। সারা দেশের কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম ও সার-কীটনাশকের দামের নিয়ন্ত্রণ দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে। গণআন্দোলনে পোশাকশ্রমিক নারী ও গৃহকর্মীরাও তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য বড় আকারে আন্দোলনে অংশ নেন। জুলাই আন্দোলনের ফলে সরকার নির্দিষ্ট কিছু খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি করে এবং মজুরি বৃদ্ধির প্রতিশ্রুত দেয়। স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর নতুন করে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয় এবং তরুণ নেতৃত্বের উত্থান ঘটে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রায় ৭.৪ কোটি শ্রমজীবী মানুষ কর্মরত। এর ৮৭% শ্রমিক অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। ২০২৪-২৫ সালে ৫০০টির বেশি সক্রিয় শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ৪.৮ কোটি পুরুষ এবং নারী শ্রমিক রয়েছে ২.৬ কোটি। দেশের শ্রমশক্তির মধ্যে কৃষিতে নিয়োজিত ৩৮%, শিল্পে ২২% এবং সেবাখাতে ৪০%।
বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকা জেলার সাভারে রানা প্লাজা ধসে প্রায় ১,১৩৪ জন শ্রমিক নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হন। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশে শ্রমিক নিরাপত্তা ইস্যু সামনে নিয়ে আসে। ওই ঘটনার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বলেছিল- ‘The Rana Plaza tragedy highlighted the urgent need for worker safety regulations in Bangladesh’s booming garment industry.’ (রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধিমালার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে)। এর ফলস্বরূপ- Accord on Fire and Building Safety in Bangladesh (বাংলাদেশে অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তি) নামে আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শত শত কারখানায় অডিট হয় এবং অনেক অনিরাপদ ভবন বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশে সংস্কারমূলক তদারকি প্রতিষ্ঠান অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
ন্যাশনাল ত্রিপত্র অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করা হয়। ক্রেতাদেশগুলোর শর্তানুযায়ী সাসটেইনেবল কমপ্যাক্ট বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব কর্মকান্ডের ধারাবাহিক উন্নতির ফলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখন অনেক বেশি পরিণত ও নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সার্বিক কমপ্লায়েন্স ছাড়া এখন কোনো কারখানাই রপ্তানি শিল্পের জন্য বিবেচিত হচ্ছে না। এর ফলে বাংলাদেশ এখন সবুজ শিল্পায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। লিড সার্টিফাইড ১০টি কারখানার মধ্যে ৭টি কারখানার অবস্থানই বাংলাদেশে। ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল থেকে আমাদের ৬৭টি কারখানা লিড সনদ পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৩টি প্লাটিনাম কারখানা। আরও ২৮০টি কারখানা সনদ পাওয়ার পাইপলাইনে আছে। তা এখন বিশ্বে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে বাংলাদেশকে রোল মডেল স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। ফলে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপদে কাজ করার পরিবেশ ভালো হলেও নিশ্চিত হয়নি। মজুরি ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগের চেয়ে একটু উন্নত হলেও স্বাস্থ্যঝুঁঁকি মোকাবেলা, মাতৃকালীন ছুটি, পরিবহন সুবিধাসহ আইএলও কনভেনশনের শর্তগুলোর সুবিধা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এদিকে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) ২০২৪ সালের প্রতিবেদন বলছে- ‘Bangladeshi workers face significant challenges regarding occupational safety, fair wages and job security.’(বাংলাদেশী শ্রমিকরা পেশাগত নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি এবং চাকরির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন)। তারপরও সূত্রমতে, গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮১% নিশ্চিত করে। গার্মেন্টস সেক্টরে নিয়োজিত শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ- যার ৮০% নারী। ২০২৩ সালের নির্দেশনানুযায়ী এ সেক্টরে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি মাসিক ১২,৫০০ টাকা- যদিও এটি ন্যূনতম জীবনযাত্রার মানের তুলনায় কম। দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের গড় আয় গ্রামাঞ্চলে ৪৫০-৫০০ টাকা এবং শহরে ৫৫০-৬৫০ টাকা।
কৃষক ও পোশাক শ্রমিকের মতো যাদের পাঠানা প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে- সেই প্রবাসী শ্রমিকরাও নানাভাবে সুবিধা বঞ্চিত। প্রবাসে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা থাকলেও অদক্ষ শ্রমিকদের অক্লান্ত কায়িক পরিশ্রম করেও টিকে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। আর প্রবাসী নারী শ্রমিকরা শুধু সুবিধা বঞ্চিতই নয়, অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
মহান মে দিবস ও ১৯৭২ সালের জুলাই আন্দোলনের চেতনা আমাদের শিখিয়েছে শ্রমের মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন সেই চেতনারই আধুনিক রূপ। যেখানে শুধু শ্রমিক নয়- ছাত্র, কৃষক, নারী, বেকার যুবক সহ সমাজের সব স্তরের মানুষ একসঙ্গে ন্যায়ের জন্য দাঁড়িয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষ্য ছিল শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মহান মে দিবস ও জাতীয় পর্যায়ে ১৯৭২ সালের জুলাই আন্দোলন কেবল ইতিহাসের স্মৃতি নয়- এ দুটি আন্দোলন শ্রমিক শ্রেণির ন্যায্য অধিকারের জন্য চলমান সংগ্রামের প্রতীক। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এটি আরো গভীর তাৎপর্য বহন করে, কারণ বাংলাদেশ একটি শ্রমনির্ভর অর্থনীতির দেশ। শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই মে দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে রাষ্ট্র, সমাজ ও নাগরিক সবাইকে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
শ্রমিক-মালিক-সরকার-সমাজের সম্মিলিত প্রয়াসেই কেবল একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমতাভিত্তিক এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। সবশেষে বলা যায়, জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের বন্ধু ও সহযোগী অপর দার্শনিক ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের অমর বাণী- ‘The emancipation of the working class must be the act of the workers themselves.’ অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণির মুক্তি অবশ্যই শ্রমিকদের নিজস্ব কাজ হতে হবে। আজকের বাংলাদেশে এ কথাই সর্বাধিক প্রাসঙ্গিক।