
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের মধুপুরে আকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার আতঙ্কে স্কুলে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন এমন অভিযোগ এনে তাকে অফিস কক্ষে ঢুকে জুতাপেটা ও মারপিট করেছেন কিছু লোক। গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটে। এরপর রোববার (৪ মে) ছিল প্রথম কার্যদিবস। কিন্তু প্রধান শিক্ষক স্কুলে যাননি।
এ প্রসঙ্গে রোববার (৪ মে) বিকেলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ‘মব জাস্টিজের’ শিকার হয়েছি। আতঙ্কে তো আছিই। শিক্ষক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে মধুপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবো। পরে এ ব্যাপারে কি করা যায় সে সর্ম্পকে সিদ্ধান্ত নিব।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিগত ২৪ সালের এপ্রিল মাসে আকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আব্দুল জব্বার। ঘটনার দিন বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে হঠাৎ কয়েকজন নারী অভিভাবক তার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে চড়াও হন। এ সময় বিক্ষুব্ধরা প্রধান শিক্ষককে জুতাপেটা, মারপিট ও টেনেহিচরে কাপড় ছিড়ে ফেলেন। এ সময় স্কুলের সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগমসহ কয়েকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তাদের ওপরও ক্ষিপ্ত হন। পরে বিদ্যালয় মাঠে সমবেত হয়ে হামলাকারীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
অভিযোগকারীদের মধ্যে জাহিন ওরফে জাহি, ঝুমা বেগম ও সুমি বেগম দাবি করেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে প্রধান শিক্ষক আমাদের মেয়েদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়েছেন। অভিভাবকদের এ খবর পেয়ে ঘটনার পরপরই মধুপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আনজুম পিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সেখানে তিনি উত্তেজিত অভিভাবকদের শান্ত করেন। এ সময় তিনি ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার বলেন, এটি আমার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। আমার মেয়েকে স্থানীয় এক যুবক উত্ত্যক্ত করতো। তাকে বিভিন্ন সময় বোঝানো হয়েছে। তবে কথা না শুনায় তাকে শাসন করা হয়েছিল। সেই ছেলে ষড়যন্ত্র করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্ত হলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগম বলেন, ঘটনার আগে কোন অভিভাবক বা শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষক সম্পর্কে কখনও কোন অভিযোগ করেনি। সেদিন ১০/১৫ জন যুবক ৫/৬ জন নারীসহ স্কুলে আসেন। যুবকরা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। নারীরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকেই জুতাপেটা করা শুরু করেন। তারা তার পরনের কাপড়ও ছিড়ে ফেলেন। পরে আমরা গিয়ে স্যারকে উদ্ধার করি।
মধুপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার পর সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ও নাজমুল ইসলামকে প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানদের সাথে অশালীন আচরনের অভিযোগ এনেছে। আবার প্রধান শিক্ষকের মেয়েকে উত্যক্ত করায় এক ছেলেকে শাসন করা হয়েছিল। সেই ঘটনার জের ধরেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই দুই রকম বিষয়ই প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক তদন্তের প্রতিবেদন রোববার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি অধিকতর তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিবেন।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোবায়ের হোসেন জানান, তার কাছে কেউ এ বিষয়ে কোন অভিযোগ করেনি।