
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইরের মির্জাপুরে চোরের অপবাদ দিয়ে বাড়ির রাস্তায় বেড়া দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই তিনটি পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে জীবনযাপন করতে পারছেন না বলে অভিযোগে জানা গেছে। উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের কাহেতারা গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার (২ মে) রাতে একজন চোর সিঁদ কেটে কাহেতারা গ্রামের বিল্লাল মিয়ার বসত ঘরে ঢুকে। এ সময় চোর ঘুমিয়ে থাকা বিমলা বেগমের ডান কানের দুল খুলে নেয়। বাম কানের দুল খুলার সময় বিমলা বেগমের ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিমলা বেগম চোরকে আটকানোর চেষ্টা করে। চোরের শরীরে তেল মাখানো এবং পিচ্ছিল থাকায় আটকাতে পারেননি। চোরকে চিনতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। পরে আশপাশের বাড়ির লোকজন এসে চুরির বিষয়টি জানতে পারেন। বিমলা বেগম পাশের বাড়ির আব্দুস সামাদের ছেলে ছানোয়ার চুরি করেছে বলে গ্রামের লোকজনকে জানান।
গ্রামের লোকজন ওই রাতেই সামাদের বাড়িতে গিয়ে সামাদ এবং ছেলে ছানোয়ারকে ডাকেন। ওই সময় তারা ঘর থেকে কোন সাড়া দেননি। বিল্লাল মিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার (৪ মে) গ্রামের লোকজন গ্রাম্য শালিসের আয়োজন করেন। সালিসে সামাদ এবং তার ছেলে ছানোয়ার উপস্থিত না হওয়ায় গ্রামের লোকজন সামাদের বাড়ির রাস্তায় বেড়া দেওয়ার নির্দেশনা দেন। মঙ্গলবার (৬ মে) বিল্লাল মিয়া বাড়ির রাস্তায় বাঁশ দিয়ে বেড়া দেন। এতে শুধু সামাদের পরিবার নয়, আরও দুটি পরিবার বাড়ি থেকে বেড় হতে পারছেন না। ফলে মানবেতন জীবনযাপন করছেন ওই তিন পরিবারের মানুষ।
গ্রামের বাসিন্দা আমছের আলী বলেন, সামাদের ছেলে ছানোয়ার হোসেন বিমলা বেগমের ঘরে ঢুকে কানের দুল চুরি করছে। সালিশে উপস্থিত না হওয়ায় রবিবার (৪ মে) রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। মাতাব্বর ইদ্রিস আলী বলেন, সালিশে হাজির করার জন্য রাস্তায় বেড়া দেয়া হয়েছে। ওই রাস্তাটির জমির মালিক বিল্লাল মিয়া।
আলালা উদ্দিন ও আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, বিল্লাল মিয়ার নিজের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা। চোরের আশ্রয়দাতা হিসেবে সামাদের দুই ভাইয়ের পরিবারের রাস্তাও বন্ধ করা হয়েছে। বিমলা বেগম বলেন, রাতে শরীরে তেল মেখে সিদ কেটে ঘরে ঢুকে আমার ৬ আনি ৪ রতি ওজনের কানের দুল ছানোয়ার চুরি করেছে। আমি ওকে চিনে ফেলেছি। তেল মাখানো পিচ্ছিল থাকায় আটকাতে পারিনি। ডান কানের দুল ছেড়ার সময় জানেন না। তবে বাম কানের দুল ছেড়ার সময় ওর হাত ধরেছিলাম। আমি ওর শক্তিতে পারিনি। কিয়াম উদ্দিনের মেয়ে আফছি বেগম বলেন, ছানোয়ার ভালো ছেলে।
ছানোয়ারের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, শুক্রবার (৯ মে) সন্ধ্যার পর থেকে স্বামী ছানোয়ার সারারাত তার সাথেই ঘুমিয়ে ছিলো। তার বিরুদ্ধে আনা চুরির অভিযোগটি মিথ্যে। সিদ্দিক মিয়া বলেন, ভাতিজা ছানোয়ার বিমলা বেগমের কানের দুল চুরি করেছে এমন অপবাদে রাস্তায় বেড়া দেয়া হয়েছে। এজন্য তিন পরিবারের লোকজন বের হতে পারছি না। জমির পাকা ধানও বাড়িতে আনতে পারছি না। আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। প্রশাসনের কাছে রাস্তাটি খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ছানোয়ার হোসেনের বাবা আব্দুস সামাদ মিয়া বলেন, দুই বছর আগে গ্রামের মাইন উদ্দিনের বোনের গরু চুরি হয়। এ অপবাদে গ্রামের লোকজন তার ছেলেকে চোর অভিযুক্ত করে। মাতাব্বররা ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ এবং ৮০ হাজার টাকা জরিমানা নেন। এ ঘটনায় গ্রামের দবির উদ্দিনের ছেলে আকাশের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেন। একইভাবে কানের দুল চুরি করেছে ছেলেকে অভিযুক্ত করে আমার কাছ থেকে টাকা নেয়ার ফন্দি করছেন গ্রামের কয়েকজন লোক। টাকা নিতে কৌশলে বাড়ির রাস্তা বন্ধ করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।