
সাদ্দাম ইমন ॥
যানবাহন ছাড়া ফিলিং স্টেশন থেকে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) সরবরাহ নিষিদ্ধ। তবুও রাতের আধারে বেআইনিভাবে টাঙ্গাইলের কয়েকটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে খোলা সিলিন্ডারে অবৈধভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গাড়ির জন্য বরাদ্দ গ্যাস এখন ব্যবহার হচ্ছে কলকারখানা, বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ প্রায় সব বাণিজ্যিক কাজে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাভার্ডভ্যানের সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। সাধারণত গ্যাসের চাপ কম থাকার অজুহাতে যেসব সিএনজি স্টেশন দিনের বেলায় যানবাহন ফিরিয়ে দেয়, সন্ধ্যার পর তারাই তৎপর হয়ে ওঠে অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রিতে। অথচ এমন বিপদজনক অবৈধ কাজ প্রশাসন ও তিতাস কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও যমুনা সেতু মহাসড়কে যেসব সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে এসবের মধ্যে চিহ্নিত কয়েকটি স্টেশন থেকেই বড় কাভার্ড ভ্যানে করে সিলিন্ডারে অবৈধভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহাসড়ক ছাড়াও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত সিএনজি স্টেশনগুলোতে অবৈধভাবে সিলিন্ডারে গ্যাস দেয়া হয় প্রতিনিয়তই। এসব সিএনজি জেলা শহরের বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ প্রায় সব বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, আকারভেদে ৬০, ৯০ ও ১৩০ লিটার ধারণক্ষমতার সিলিন্ডার কাভার্ডভ্যানে স্থাপন করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাভার্ডভ্যানে স্থাপিত এসব সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা না গেলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রতিদিন রাত ১০টার পর থেকেই গাজীপুর, সাভার থেকে কাভার্ডভ্যানগুলো আসে টাঙ্গাইলে। মহাসড়কের এসব চিহ্নিত সিএনজি স্টেশনগুলো থেকে বড় কাভার্ডভ্যানে করে আনা বহু সিলিন্ডারে দেয়া হচ্ছে সিএনজি গ্যাস। টাঙ্গাইল শহরের রাবনা বাইপাসে অবস্থিত ইন্ট্রাকো ও নিটোল সিএনজি স্টেশন ঘুরে এমন ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে।
এসব সিএনজি স্টেশনে গিয়ে আরও দেখা যায়, ভেতরে ও বাহিরে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষমাণ বেশকয়েকটি সিলিন্ডারবাহী কার্ভাডভ্যান রয়েছে। পাশেই একটি কাভার্ডভ্যানের ভেতরে মিলল বিশেষ কায়দায় স্থাপন করা ৬০টি বড় আকারের সিলিন্ডার। আরও কয়েকটি সিলিন্ডারবাহী মিনি ও বড় কাভার্ডভ্যান সিএনজি স্টেশনের আশেপাশেই অপেক্ষমাণ রয়েছে। এসব সিলিন্ডারে সিএনজি স্টেশন থেকে রিফিল করা হচ্ছিল রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি)। যানবাহন ছাড়া অন্য কোথাও সিএনজি বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও স্টেশন কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না।
এভাবে গ্যাস সরবরাহ করায় বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সর্বশেষ সম্প্রতি সিলিন্ডারবাহী একটি কাভার্ডভ্যান গ্যাস নিতে নিটোল সিএনজি ফিলিং স্টেশনে আসে। সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিলের সময় হঠাৎ ত্রুটি দেখা দিলে মেরামতের জন্য পাশের একটি ওয়ার্কশপ থেকে আনা হয় দুইজন মিস্ত্রি। মেরামতের কাজের একপর্যায়ে আবারও গ্যাস রিফিলের চেষ্টা করলে তা আগুন ধরে যায়। এতে বড় কোন দুর্ঘটনা না ঘটলেও ঝুকি থেকেই যাচ্ছে।
সিলিন্ডারে গ্যাস নিতে আসা দুই ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্যাসের চাপ কম থাকায় নিয়মিত এই স্টেশন থেকে গাজীপুরে অবস্থিত ফ্যাক্টরির জন্য গ্যাস নেয়া হয়। সিলিন্ডার বহনকারী কাভার্ডভ্যান চালক রহমত আলী বলেন, আমি গাজীপুরের একটি ফ্যাক্টরির গাড়ী চালক। কাভার্ডভ্যান নিয়ে আমি সপ্তাহে দুই দিন আসি এখানে গ্যাস নিতে। টাঙ্গাইলের সিএনজি স্টেশনগুলোতে দিনে গ্যাস দেয় না বলেই রাতে আসতে হয়। অপর কাভার্ডভ্যান চালক আশরাফ বলেন, টাঙ্গাইলের মাত্র কয়েকটি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস দিয়ে থাকে। গাজীপুরে পুলিশের কড়াকরি ও গ্যাস অফিসের অভিযানের কারনে এখান থেকেই আমরা গ্যাস নিয়ে যাই ফ্যাক্টরির জন্য।
টাঙ্গাইল বাইপাসে অবস্থিত ইন্ট্রাকো ও নিটোল সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তারা কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরা বলেন, সারাদিন আমরা বিভিন্ন যানবাহনগুলোতে সিএনজি দিয়ে থাকি। কিন্তু রাত ১০টার পর থেকে গাজীপুর ও সাভার থেকে আসা কাভার্ডভ্যানগুলোতে থাকা সিলিন্ডারে গ্যাস দেই। এটা বৈধ না অবৈধ তা আমাদের মালিক বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।
যোগাযোগ করা হলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিজেদের সক্ষমতার অভাব আছে জানিয়ে তিতাসকে নখ-দন্তহীন বাঘ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গত চার-পাঁচ মাস ধরে গ্যাসের চাপ কম। এজন্য সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে কারখানাগুলো। আমরা না পারছি ব্যবস্থা নিতে, না পারছি…। তিতাসের পক্ষ থেকে কোনো শক্ত নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টাঙ্গাইল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, অনুমোদিত কনভারসন সেন্টার থেকে গাড়িতে লাগানো সিলিন্ডার ব্যতীত খোলা সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বেআইনি। সিএনজি স্টেশনগুলোকে খোলা সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ না করার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। এরপরও যদি কেউ খোলা সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ করেন, তাহলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।