
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
লৌহজং নদীর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল খেয়াঘাটে ব্রিজ নির্মাণের দাবী জোরালো হচ্ছে। সেতু নির্মাণের দাবিতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা, জেলা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বছরের পর বছর যোগাযোগ এবং লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। দীর্ঘদিনের দাবী পুরণ না হওয়ায় ক্ষুব্দ হয়ে উঠছে এলাকাবাসী।
কুমুদিনী হাসপাতাল খেয়াঘাটে ব্রিজ নির্মাণের দাবীতে শুক্রবার (১০ মে) বিকেলে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ঘাট সংলগ্ন মির্জাপুর বাবু বাজারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মির্জাপুর বাবু বাজার, সরিষাদাইড়, আন্ধরা, কুতুববাজার, দুর্গাপুর, ভাওড়া, মন্দিরাপাড়া, মুসলিমপাড়া, বুধিরপাড়া, কামারপাড়া, ফতেপুর, হাড়িয়া, শ্বশ্বধরপট্রি ও পাহাড়পুর গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামগুলোর তিন শতাধিক মানুষ এই সমাবেশে অংশ নেন।
সমাবেশে ব্রিজের দাবী তুলে ধরে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রাণ গোপাল সাহা ও মুক্তি সাহা, ব্যবসায়ী খন্দকার আব্দুল সাত্তার, বাবলু কর্মকার, পিন্টু সাহা, শ্রীদীপ সাহা, ইউপি সদস্য ময়নাল হক, মন্তোষ কর্মকার ও সালাউদ্দিন ডন বক্তৃতা করেন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এই সাঁকো দিয়ে মির্জাপুর পৌর এলাকার সাহাপাড়া, সরিষাদাইড়, আন্ধরা ছাড়াও মির্জাপুরের দক্ষিণাঞ্চলের ভাওড়া, বহুরিয়া, উয়ার্শী ইউনিয়নের অন্তত ৩৫ গ্রামের লোকজন হেঁটে নদী পার হয়ে রিকশা, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়িসহ নানা ধরনের যানবাহনে গন্তব্যে যান। সাঁকোটি দিয়ে নিয়মিত মোটরসাইকেলও চলাচল করে। কুমুদিনী হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং স্কুল ও কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই নদীর দক্ষিণ পারে বসবাস করেন। তাঁরাও এই সাঁকো ব্যবহার করেন। এছাড়া সাঁকোটি দিয়ে অনেকে মোটরসাইকেলযোগে পার্শ্ববর্তী ঢাকার ধামরাই ও মানিকগঞ্জের সাটুরিয়াসহ বিভিন্ন গন্তব্যেও যাতায়াত করেন। কিন্তু সাঁকোটি হঠাৎ ভেঙে যাওয়ায় মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুুই দিনেও সেখানে পারাপারের জন্য কোনো নৌকারও ব্যবস্থা করা হয়নি।
লৌহজং নদীর কুমুদিনী হাসপাতাল খেয়াঘাটটি দিয়ে প্রতিদিন স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও রোগীসহ কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ পারাপার হয়ে থাকে। ঘাটটি টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ থেকে প্রতিবছর ইজারা দিয়ে থাকেন। ইজারাদার বা খেয়াঘাটের মাঝি বছরের ছয়মাস (বর্ষায়) খেয়া নৌকা দিয়ে এবং শ্রীষ্মকালে বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাত্রী পারাপার করে থাকেন। খেয়া নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করতে গিয়ে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানী ঘটেছে। গ্রীষ্মকালে নদীর উভয় পাড়ের ঢালু নেমে ও উঠে (কমপক্ষে ৮০ ফুট) সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়। এতে বৃদ্ধ ও শিশুদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এছাড়া পাশের ধামরাই, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলার মানুষ এই খেয়াঘাট পারাপার হয়ে মির্জাপুরসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া অত্র এলাকার রোগীদের খেয়া বা সাঁকোর কারণে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে হাসপাতালে নিতে হয় বলে এলাকার ভুক্তভুগিরা অভিযোগ করেছেন।
গত শনিবার (৩ মে) উজান থেকে আসা জোয়ারের পানি ও কচুরিপানার চাপে সাঁকোটি ভেঙ্গে গেলে দীর্ঘ এক সপ্তাহ এলাকার মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তিন কিলোমিটার ঘুরে সাধারণ মানুষের মির্জাপুর বাজারে যাতায়াত করতে হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে বাঁশের সাঁকোটি কোন রকম মেরামত করে ঝুকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। সাঁকোটি ভেঙ্গে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকার লোকজন আশঙ্কা করছেন।
মির্জাপুরের সরিষাদাইড় গ্রামের বাসিন্দা খন্দকার আব্দুল সাত্তার জানান, কুমুদিনী খেয়াঘাটে ব্রিজ নির্মাণে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন ছাড়াও মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছেন। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও জনগুরুত্বপূর্ণ এই খেয়াঘাটে ব্রিজ নির্মাণ হয়নি। কুমুদিনী খেয়াঘাটে ব্রিজ নির্মাণ হলে দক্ষিণ মির্জাপুরসহ ধামরাই, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ এলাকার মুমুর্ষু রোগীদের দ্রুত সময়ে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে। এতে রোগীরা যথাসময়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন এবং জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব হবে। তিনি জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার রায় বলেন, খেয়াঘাটটিতে একটি পায়েহাটা ব্রিজ নির্মাণ করা হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাগব হবে।