সাদ্দাম ইমন ॥
দেশের পপ সম্রাট নগরবাউল খ্যাত জেমসের গাওয়া ১২টি গান সরাসরি শুনতে তুলকালাম ঘটনার শিকার হতে হয়েছে ভক্তদের। জেমসের মঞ্চে এক ঘন্টা ২২ মিনিট পারফর্মের আগে ও পরে মোবাইল চুরি, মারামারি ও নারী শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে।
টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ (বিবিএফসি) উপলক্ষে আয়োজিত ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে দুরন্ত ১৬ ব্যাচের আয়োজনে জেমসের কনসার্টে এমন সব ঘটনা ঘটেছে। তবে মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে টাঙ্গাইল শহীদ মারুফ স্টেডিয়ামে এ যাবতকালের স্মরণীয় কনসার্টে গান পরিবেশন করেন জেমস।
কনর্সাট শেষে মোবাইল চুরির ঘটনায় বুধবার (১৪ মে) দুপুর ১২টা পর্যন্ত কমপক্ষে ১০৫ জন থানায় জিডি করেছেন। কনর্সাট থেকে ফেরার পথে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ৬ শতাধিক মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতো বড় আয়োজনে আয়োজকরা সুষ্ঠভাবে শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এদিকে কয়েকজন নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এবং গ্রুপে গ্রুপে মারপিটের ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দেয়া হয়নি বলে থানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এদিকে জেলায় কর্মরত অনেক গণমাধ্যম কর্মী পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আয়োজক বিন্দুবাসিনী স্কুলের দুরন্ত ১৬ ব্যাচের কমিটির বাধার কারণে স্টেডিয়ামে সাংবাদিকরা প্রবেশ করতে পারেননি।
জানা যায়, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করা হয়। এই ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় এই টুর্নামেন্টের ট্রফি উন্মোচন করা হয়। এর উদ্বোধন করেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহিন, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালসহ বিএনপির ও আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জেমসের কনসার্ট উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরের পর থেকেই ঢল নামতে থাকে টাঙ্গাইল স্টেডিয়াম অভিমুখে। জেমস মঞ্চে ওঠার আগে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন ব্যান্ডগুলো সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পরে রাত ৯টার দিকে জেমস মঞ্চে ওঠেন। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে মোট ১২টি গান পরিবেশন করে তিনি দর্শকদের মাতোয়ারা করে তুলেন। এ আগেই টাঙ্গাইল স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তবে কনসার্ট চলাকালীন সময়ে স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাহিরে জেমসের গানের তালে তালে চলে মোবাইল চুরির মহোৎসব। সেই সাথে বিভিন্ন স্থানে গ্রুপে গ্রুপে বিভিক্ত হয়ে উশৃঙ্খল তরুনরা মারামারিতে লিপ্ত থাকে। কিছু সুযোগ সন্ধানী বখাটে যুবক ও তরুনরা কনর্সাটে আসা তরুনী ও নারীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। বেশকয়েকজন তরুনী ও নারীকে শ্লীলতাহানিরও অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে অনেকেই পোস্ট করছেন। এ নিয়ে জেলায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।
দর্শনার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আয়োজক কমিটি যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি। বিশেষ করে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কারণে হিমশিম খেতে হয়েছে। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এতে সাধারণ অনেক দর্শনার্থীই ঠিকমতো কনসার্ট উপভোগ করতে পারেননি।
টাঙ্গাইলের ক্রীড়া সাংবাদিক ও বিন্দুবাসিনী স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য সাংবাদিক হিসেবে ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে ফিরে এসেছি। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও টিকিট ছাড়া প্রবেশ করতে দেয়নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
সাংবাদিক নাঈম খান রাব্বি বলেন, পেশাগত কাজের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু জেমসের কনসার্টে আমার মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে। এছাড়া আমার ভাগনেরও ফোন হারিয়েছে।
এসব বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বলেন, জেমসের কনর্সাটে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। মোবাইল চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০৫ জন জিডি করেছেন।