
ফরমান শেখ, ভূঞাপুর ॥
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা-ভূঞাপুর চরগাবসারা আঞ্চলিক মহাসড়কের ১২ কোটি টাকা বরাদ্দের সংস্কার কাজে ধীরগতি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। ফলে সড়কের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। এতে এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিনই বিকল হচ্ছে যানবাহন।
জানা গেছে, এলেঙ্গা-চরগাবসারা ভায়া ভূঞাপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে ডাবল বিটুমিনাস সারভেস ট্রিটমেন্ট পদ্ধতিতে সংস্কার কাজের প্রকল্প গ্রহণ করে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপদ বিভাগ। প্রায় ১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকার এই সংস্কার কাজ চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এতে পাথর, বিটুমিন ও কেরোসিনের সংমিশ্রণে সড়কে কার্পেটিং করার অভিযোগ উঠেছে। ২২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ইতোমধ্যে ৯ কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে সড়কে খানাখন্দ ও ফাটল সংস্কার না করেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে এভাবেই কার্পেটিং করায় বেশিদিন সুফল না পাওয়ার আশঙ্কা সড়ক ব্যবহারকারীদের। এরআগেও গত বছর দুই বার এই সড়কের সংষ্কার করেছে সওজ কর্তৃপক্ষ।
সিএনজি চালক জাহিদ। অন্য চালকরা যখন যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করছেন সেখানে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ গাড়ি মেরামত কাজে ব্যস্ত। সড়ক সংষ্কার কাজের কারণে তার গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে ভূঞাপুর থেকে এলেঙ্গা যাওয়ার পথে পালিমা ব্রিজ এলাকায় তার গাড়ির চাকা ফেঁটে যায়। পরে একটি নতুন চাঁকা কিনে লাগানোর কাজ করছেন তিনি নিজেই। শুধু জাহিদই নয়, তার মত অনেক চালকই সড়কের সংস্কার কাজের কারণে পরিবহন বিকল হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। অনেক চালক সড়কের উপরই যাত্রী দাড় করিয়ে রেখে গাড়ি মেরামত করছেন। এছাড়া চলন্ত অবস্থায় সড়কের পাথর ছিটে গিয়ে যাত্রীদের শরীরে লাগছে। এছাড়া পাথরের কারণে গাড়ির কাজ ভেঙে যাচ্ছে। জাহিদ আরও জানায়, সপ্তাহে ৩ বার চাকা পরিবর্তন করতে হয়েছে। যেভাবে সড়কের কাজ করছে তাতে চালকদের গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। এতে সারাদিনে যে উপার্জন হয় তাতে সংসার চলে। তীব্র রোদের মধ্যে সড়কে গাড়ি মেরামত করতে হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এলেঙ্গা-ভূঞাপুর সড়কের কুচটি এলাকায় সংস্কার কাজ করছে ঠিদাকারের লোকজন। পূর্বে কার্পেটিং করা পাথরের উপর ছোট পাথর দিয়ে পুণরায় কার্পেটিং করা হচ্ছে। এতে সড়কে ফেলানো পাথরগুলো গাড়ির চাঁকায় উঠে আসছে। ঠিকাদারের দাবি ৩৫ ভাগ পাথর উঠে পড়বে। তবে সেই পাথরগুলো সড়কেই থাকবে। একসময় সে পাথরগুলো সড়কে লেগে যাবে।
পরিবহন চালকরা জানায়, আগের সড়কটিই ভাল ছিল। তবে যে অংশটুকুতে খানাখন্দ বা ফাটল ধরেছিল সেটাই সংস্কার করা দরকার ছিল। এভাবে পুরো সড়ক এভাবে পাথর ছিটিয়ে কাজ করা ঠিক হয়নি। স্থানীয়রা জানান, সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ সংস্কার না করে এভাবে ভাল সড়ক সংস্কারের নামে নিম্নমানের কাজ করায় সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। এতে ঠিকাদার ও কর্মকর্তারা লাভবান হচ্ছে।
সড়কের সাব ঠিকাদার ফারুক হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সড়কের সংস্কার কাজ হচ্ছে সওজ কর্তৃপক্ষের নিদের্শেই। অনেকেই বুঝেনি তাই হয়ত এমন কথা বলছে। কাজটাই এভাবে করতে হবে।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপদ বিভাগ বিভাগের কার্য্য সহকারী রুবেল হোসেন জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে সেভাবেই কাজ হচ্ছে। বিটুমিনের কাজ এভাবেই হয়।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমেরি খান জানান, সংস্কার কাজের মান ভাল হচ্ছে। বরাদ্দ কম থাকায় ডাবল বিটুমিনাস সারভেস ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। এতে পরিবহনগুলো সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করতে পারবে না।