
স্টাফ রিপোর্টার ॥
চলমান খরায় শুধু মানুষই হাঁসফাঁস করছে না অসহায় বন্যপ্রাণীরাও দুঃসময় পার করছে। তৃষ্ণার্ত হরিণ, বানর ও মুখপোড়া হনুমান পিপাসা নিবারণে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। টাঙ্গাইলের মধুপুরে প্রায় ৩ হাজার একরে এখনো গভীর জঙ্গল রয়েছে। এখানে হরিণ, বাগডাস, লজ্জাপতি বানর, মুখপোড়া হনুমান, দেশি বানর, বন মুরগি, তক্ষক, সজারু ও অজগর এবং সারস, শামুকখোলসহ নানা প্রজাতির বক দেখা যায়। বিদেশি প্রজাতির গাছপালার আধিক্য থাকায় বনে খাবার সংকট রয়েছে। খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে এসে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। চলতি খরায় পশুপাখির পানীয় জলের তীব্র সংকট চলছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় বনাঞ্চলের গড়গড়িয়া লেক শুকিয়ে গেছে। টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চল ঘুরে বন্যপ্রাণীদের এমন করুণ চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লেকটি খনন না করায় গভীরতা কমছে। শুষ্ক মৌসুমে লেকের কোথাও কোথাও হাঁটু পানি থাকে। দিনের বেলা প্রচণ্ড রোদে লেকের পানি ফুটন্ত জলের মতো গরম থাকায় পশুপাখিরা পান করতে পারে না। স্থানীয়রা বন্য পশুপাখির পানীয় জলের সর্ববৃহৎ উৎস লেক খননের দাবি জানান। স্থানীয় সংবাদকর্মী লিটন মিয়া জানান, বনাঞ্চলের জিকুশি বাইদ, চুনার বাইদসহ শতাধিক বাইদ শুকিয়ে গেছে। পাহাড়ের চালার গাছপালা নিশ্চিহ্ন হওয়ায় পাহাড়ি ঝরনার অস্তিত্ব নেই। ফলে বিল ও বাইদগুলো পানি শূন্য। ফলে বন্য পশুপাখির খাদ্য ও পানীয় জলের তীব্র সংকট চলছে।
স্থানীয় বন বিভাগ জানায়, পশুপাখির খাদ্য জোগান দেওয়ার জন্য দেশি গাছ লাগানো হচ্ছে। কিন্তু বাইদ, পুকুর ও বিল শুকিয়ে যাওয়ায় পানীয় জলের সংকট চলছে। বন বিভাগের ভাষ্য, মুখপোড়া হনুমান দলবদ্ধ হয়ে চলাচল করে। এরা বহেড়া, আমলকি, হরিতকি, আজুলি, ঢেউয়া গাছের দেশি ফল ও পাতা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। একদল তৃষ্ণার্ত হনুমান বনের কোথাও পানি না পেয়ে জাতীয় সদর উদ্যান রেঞ্জ অফিসে হাজির হয়। তাদের ছটফট করার দৃশ্য দেখে রেঞ্জার মোশাররফ হোসেন বাটিতে করে পানি দেন। তৃষ্ণার্ত হনুমানরা একে একে তৃপ্তির সাথে পানি পান করে জঙ্গলে ফিরে যায়।
তিন দিন আগে তৃষ্ণার্ত একটি গর্ভবতী হরিণ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে বিজয় নগর এলাকার একটি বোরো খেতে পানি পান করতে গিয়ে গৃহস্তের জালে আটকা পড়ে। সেটিকে উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. হাবিবুন্নাহার হনুমান নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি জানান, সিলেট, চট্টগ্রাম ও মধুপুর বনাঞ্চলে মুখপোড়া হনুমান দেখা যায়। মধুপুর যেহেতু পত্র ঝরা বন সেহেতু এখানকার হনুমানের সঙ্গে অর্ধপত্র ঝরা সিলেট এবং চিরহরিৎ চট্টগ্রাম বনের হনুমানের সঙ্গে বৈশিষ্ট্যগত অনেক পার্থক্য রয়েছে। মধুপুরে বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন চলে যাওয়ায় হনুমান বেঘোরে প্রাণ হারায়। খাদ্য ও জল সংকটে লোকালয়ে এসে নির্মমতার শিকার হয়।
এ বিষয়ে মধুপুর বনাঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক আশিকুর রহমান জানান, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট গত (২২ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা ছয়টি মুখপোড়া হনুমান মধুপুর জঙ্গলে ছেড়ে দেয়। নবাগত এসব হনুমান অপরিচিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না। এরাই প্রচণ্ড খরায় পানীয় জল পান করতে সদর উদ্যান রেঞ্জে এসেছিল। বনাঞ্চলে এখনো দুই একটি লেক রয়েছে যেখান থেকে বণ্যপ্রাণী ও পশুপাখিরা পানি পান করার সুযোগ পাচ্ছে।