স্টাফ রিপোর্টার ॥
দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত ফল’ হিসেবে খ্যাত কোকো এখন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় চাষ হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ী গ্রামের এক সৌখিন বৃক্ষপ্রেমিক তাপস বর্ধন বাড়ির পাশের বাগানে কোকো গাছ লাগিয়ে এর সফল চাষে উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
চার বছর আগে তাপস বর্ধন তার বাগানে ১৭টি কোকো গাছ লাগান। এবার সেগুলোর একটি গাছে এসেছে ১২০টি ফল, যেখান থেকে ঘরোয়াভাবে তিনি দুই কেজি কোকো পাউডার সংগ্রহ করেছেন। বাকিগুলোতেও আগামী বছর থেকে ফল আসবে বলে তিনি আশা করছেন। এসব ফল থেকে সংগ্রহ করা বীজে তিনি নিজেই নার্সারি করেছেন এবং আগামী জুলাই মাসে বাগানে আরও দেড় শতাধিক গাছ লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তাপস বর্ধনের কোকো চাষের গল্পটি ব্যতিক্রমী হলেও অনুপ্রেরণামূলক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল চত্বর থেকে ২০১৮ সালে সংগৃহীত একটি কোকো ফলের বীজ থেকেই শুরু তার এই যাত্রা। উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগ থেকে। কিন্তু প্রকৃতি ও বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা তাকে নিয়ে গেছে গাছপালার জগতে।
তাপস বর্ধন বলেন, কোকো গাছ খরা ও অতিবৃষ্টির মতো প্রতিকূল আবহাওয়া সহ্য করতে পারে। তবে জলাবদ্ধতা একেবারেই সহ্য করে না। এটি রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে অনেকটাই নিরাপদ এবং তেমন যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। সারা বছর গাছে ফুল এলেও নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ফুলের প্রাচুর্য বেশি দেখা যায়। এতে বছরজুড়েই ফল আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার বিভাগ বিগত ২০১৪ সালে প্রথম ভিয়েতনাম থেকে কোকো গাছের চারা এনে সাভারে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করেছিল। যদিও বর্ধনশীল ফলন পাওয়া গেলেও বানিজ্যিকভাবে চাষের দিকে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি।
কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশের কোকোর বাজার পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। পাহাড়ি কিছু এলাকায় সীমিত পরিসরে কফির আবাদ হচ্ছে। কোকোর বানিজ্যিক চাষে আগ্রহী হলে যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। তবে এটি লাভজনক হতে পারে।
তাপস বর্ধনের কোকো চাষ ইতোমধ্যেই আশপাশের মানুষের আগ্রহ জাগিয়েছে। অনেকেই তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে গাছ লাগাতে শুরু করেছেন। তার এই উদ্যোগ হয়তো ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কোকো চাষের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।