
স্টাফ রিপোর্টার ॥
আসন্ন ঈদ যাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইল প্রান্তে প্রায় ৪ বছরে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এতে মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপসহ নানা কারণে আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের যানজটে চরম ভোগান্তির শঙ্কা করছেন পরিবহন চালক ও যাত্রীদের। আর জেলা পুলিশ বলছে, নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা করতে মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে ৬৫ কিলোমিটার পালাক্রমে ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
জানা যায়, সাসেক ২ প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ৪ বছরে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। ঈদে মহাসড়কের চার লেন চালুর কথা বললেও বেশির ভাগ অংশে মূল সড়কের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ৫ আগস্টের পর মহাসড়কের এলেঙ্গা হতে যমুনা সেতু পর্যন্ত তেমন কাজ করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে ঈদ ঘনিয়ে আসায় টুকটাক সড়কের কাজ করছে তারা। বিগত ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২১ ডিসেম্বরে এই অংশের কার্যাদেশ পায় আব্দুল মোনায়েম নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি ২০২৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ কাজ বাকি রয়েছে।
এদিকে ঈদযাত্রায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাড়কের টাঙ্গাইলের অংশ দিয়ে উত্তরাঞ্চলসহ আশেপাশের প্রায় ২৩ জেলার লাখ লাখ মানুষ মহাসড়কটি ব্যবহার করে থাকে। তাই এই সড়কে গাড়ির চাপ থাকে বেশি। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের ভিড়ে এই মহাসড়কে সৃষ্টি হয় যানজটের।
পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতির পরেও যানজটের আশঙ্কা করছেন এই সড়কে চলাচলকারী পরিবহন চালক ও সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন চালকরা বলছেন, ঈদ এলেই শুরু হয় তরিগরি কাজ। আর মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত চারলেনের কাজ করছে। গত ঈদে চারলেনের কিছুটা সুবিধা পেলেও সার্ভিস লেনের কাজ শেষ করতে পারেনি। তবে এবারও মহাসড়কের চারলেনের সুবিধা পেলেও পুরোপুরি সুবিধা পাবে না এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীরা। এখনো মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে কাজ করা হচ্ছে।
পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের সফটওয়ারে সমস্যার কারণে যদি টোল আদায় দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে এবং সেতুর উপর যদি দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকা থাকে। এছাড়া প্রতি বছরই ঈদকে সামন রেখে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা সড়কে লক্করঝক্কর এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করে। এসব গাড়ি হঠাৎ করেই মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতে উভয় পাশের গাড়ি থেমে পড়ে। এক পর্যায়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা এবং গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজট হয়।
সরেজমিনে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, মহাসড়কের এলেঙ্গার পর থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ চলছে। উত্তরবঙ্গগামী লেনে পুরোদমে চলছে কাজ। আগের তুলনায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। রংপুরের বাসের যাত্রী নাহিদুল হাসান বলেন, কোরবানীর ঈদের কারণে মহাসড়কে পশুবাহী যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে। এছাড়া যদি মহাসড়কে দুর্ঘটনা হয় তাহলে যানজটের সৃষ্টি হবে। পুলিশকে মহাসড়কে আগের থেকে দায়িত্ব আরো বেশি পালন করতে হবে। গাজীপুরগামী বাসের যাত্রী সাফায়েত হোসেন বলেন, মহাসড়কে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচলে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ভূমিকা রাখতে হবে। মহাসড়কে যাতে যানজট না সে লক্ষে আগে থেকেই সর্তক থাকতে হবে।
উত্তরবঙ্গগামী বাসের চালক আবু সাঈদ বলেন, মহাসড়কে কম বেশি যানজট হবে। বিশেষ করে কোরবানী পশুর কারণে মহাসড়কে আরো চাপ বাড়বে। সেক্ষত্রে মহাসড়কে যানবাহনের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্নস্থানে কাজ চলছে মহাসড়কের। অপর বাসের চালক মোহাম্মদ সবুজ বলেন, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের কাজ চলমান রয়েছে। যার কারণে এবার মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। তবে পুলিশ যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে যানজট হবে না।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, মহাসড়কে কম বেশি যানজট হবেই। তবে যানজট যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে এদিকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রাখতে হবে। মহাসড়কে যানজট নিরসনে পুলিশের সাথে এবারও আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবেন। অনেক সময় ঈদের আগে শ্রমিকরা আন্দোলন করেন। সে কারণেও মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসনে যে সকল কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। তা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে মহাসড়কে যানজট কম হবে। ঢাকার পুরানো গাড়িগুলো যাতে মহাসড়কে আসতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। পুলিশকে আমরা সার্বক্ষণিক সহযোহিতা করবো।
এ ব্যাপারে যমুনা সেতুর ম্যানেজার (টোল অপারেশন) প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, ঈদে ভোগান্তি লাঘবে যমুনা সেতুতে আলাদা মোটরসাইকেলের বুথসহ উভয় পাশে ৯টি করে বুথ যানবাহন পারাপার হবে। এর মধ্যে ২টি করে উভয় পাশেই মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন থাকবে। টোল আদায়ের সময় আমার প্রচুর পরিমানে খুচরা টাকা থাকবে। সার্বক্ষণিক টোল চলাচল রাখার চেষ্টা করা হবে। এছাড়া সেতুর পাশেই একটি রেকার প্রস্তত থাকবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘরঘুখো মানষের ভোগান্তি লাঘবে মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হবে না। এছাড়াও স্বস্তিদায়ক ঈদ যাত্রা করতে আগামী ২ জুন থেকে টাঙ্গাইলের অংশে ৬৫ কিলোমিটার মহাসড়কে ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এই মহাসড়কে ৪টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। ২৫টি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করবেন। ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার ব্যাপারে এসব মোবাইল টিম কাজ করবে।
উল্লেখ্য, স্বাভাবিক সময়ে যমুনা সেতুতে ২৪ ঘন্টায় ১৮ হতে ২০ হাজার যানবাহন পারাপার হলেও গত ঈদে ২৪ ঘন্টায় ৪৮ হাজারের অধিক যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে।