
দেলদুয়ার প্রতিনিধি ॥
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি ও বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। বুধবার (১১ জুন) বেলা ১১ টায় উপজেলার লাউহাটী বাজারে কাতুলিসহ পাশর্বর্তী কয়েকটি গ্রামের জনসাধারণের অংশগ্রহণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। বিগত ২০২৪ এর নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী ছিলেন। এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি এক পক্ষের নিকট থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে অন্য পক্ষকে ঘায়েল করতে নিজে মামলা সাজিয়ে দেন এবং সে মামলাগুলো পরিচালনা করে লাভবান হন। নিজে আইনজীবী হওয়ার সুবাদে মামলা করিয়ে দিয়ে বাদী-বিবাদী উভয়কেই সর্বশান্ত করেছেন এমন অনেক নজির রয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া ভূক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাতুলী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার আশরাফুল। যার ৬টিতে হাবিবুর রহমান ডিগ্রী পেয়েছেন। বাকি ৭টি এখনও চলমান রয়েছে। একই গ্রামের আব্দুল হামিদ খানের ছেলের তাহের খানের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়েছেন ১৩টি, শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৩টি, আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১০টি, দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দিয়েছেন।
আশরাফের বাহামভূক্ত সহযোগী সাবেক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সদস্য আরশাদুল ইসলাম, হাসান, কামাল, শিমুল, সাজ্জাদ, জুয়েল, জাকির, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী শাহিন মেম্বার, কৃষক লীগের ইউনিয়ন সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। উল্লেখিত লোকজন ব্যরিস্টার আশরাফের বিভিন্ন অপকর্মের হাতিয়ার বলে দাবি দাবি করেছেন মানববন্ধনে অংশ নেয়া অভিযোগকারীরা।
উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের কাতুলী গ্রামের মজনু মিয়ার ছেলে আশরাফুল ইসলাম লন্ডনে আইন বিষয়ে অধ্যয়নকাল থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। ওই সময়ে লন্ডনে সফরে যাওয়া জনৈক বিচারপতিকে হেনস্তা করেন আশরাফুল। ওই বিচারপতি দেশে এসে আশরাফুলের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। পরে দেশে আসার সময় এয়ারপোর্টে গ্রেফতার হয়েছিলেন আশরাফুল ইসলাম।
কাতুলী গ্রামে একই মাঠে গরু কুরবানী নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ গত কয়েক বছর যাবত। গত ৩ বছর যাবত প্রশাসনের উপস্থিতিতে ওই গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরও গত (৫ জুন) উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসে সুষ্ঠ সমাধান দেন। বিরোধপূর্ণ মাঠে গরু কোরবানী করবেন না মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন ব্যরিস্টার আশরাফুলের বাবা মজনু মিয়া। কিন্তু ঈদের আগের দিন ব্যরিস্টার আশরাফুল বাড়ী এসে ওই সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিরোধপূর্ণ মাঠেই কোরবানী দেবেন এমন সিদ্ধান্ত নেন। প্রশাসনের নিকট এ খবর পৌছলে গরু কোরবানী দেওয়ার আগেই সেনাবাহিনী, থানা পুলিশসহ সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওই স্থানে হাজির হয়ে সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়াতে বিরোধপূর্ণ মাঠে কোরবানী না করার জন্য বলেন। কিন্তু ব্যরিস্টার আশরাফুল ইসলাম প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই স্থানেই কোরবানী করবেন এমন সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে ব্যরিস্টার আশরাফুল বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে প্রশাসন সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশংকায় সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত ও পরামর্শে কাতুলী মসজিদ ও মাদরাসার সামনের খোলা জায়গার পরিবর্তে যার যার গ্রামে বাড়ীর সমনে পশু কোরবানী দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিলো। এ বিষয়ে জনৈক ব্যক্তির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রশাসন কার্যক্রম গ্রহণে সচেষ্ট থাকবে। কারও কল্পনা প্রসূত উস্কানীমূলক কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
অভিযোগ বিষয়ে ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি বাদি হয়ে কারও বিরুদ্ধে মামলা করিনি। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী আরেক নারী। অভিযোগকারীরা ওই নারীর জমি বেদখল দিয়ে সেখানে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছেন। এটাই আসল ঘটনা।