
স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদরের পোষ্টকামুরী গ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের বসবাস থাকলেও এবারও এক সমাজে কোরবানির ধারাবাহিকতা সম্পন্ন করেছেন। গত (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রামের বেশকয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার নামে একাধিক মামলা হলে তারা আত্মগোপনে যান। তারপরও তারা একটি সমাজে পশু কোরবানি করেছেন। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে এই ধারাবাহিকতা চলছে বলে গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন। এ বছর গ্রামটিতে ৯৪টি গরু ও ২৩টি খাসি কোরবানি করা হয়েছে। গ্রামটির এক হাজার ১৫৯ পরিবারের পাঁচ হাজার ৩৮৩ জন লোকের মধ্যে প্রত্যেককে ৮০০ গ্রাম করে মাংস বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা আরো সহস্রাধিক দুস্থ মানুষের মধ্যে প্রায় ৫০০ গ্রাম করে মাংস বিতরণ করা হয়। গত বছর গ্রামটিতে ৯১টি গরু ও ২১টি খাশি কোরবানি করা হয়। তখন পাঁচ হাজার ২৫৫ জন লোকের মধ্যে প্রত্যেকেই ৭৫০ গ্রাম করে মাংস পেয়েছিলেন। প্রায় দুই যুগ ধরে গ্রামটিতে সামাজিকভাবে এক মাঠে পশু কোরবানি করে জনসংখ্যা হারে মাংস বিতরণ করে ঈদ উদযাপন করে আসছে বলে পোষ্টকামুরী গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা জানিয়েছেন।
গ্রামের বাসিন্দা বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসীন হলের সাবেক জিএস সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব, মির্জাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুর রহমান, উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল কাদের শিকদার, পৌর বিএনপির সভাপতি হযরত আলী মিঞা, সাধারণ সম্পাদক এস এম মহসীন, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক ভিপি আবু আহমেদ, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ জানান, গত দুই যুগ ধরে পোষ্টকামুরী গ্রামবাসী সামাজিকভাবে এক মাঠে একত্রে কোরবানি করে থাকেন। কোরবানি করার জন্য গ্রামের লোকজনের আর্থিক সহায়তায় গ্রামের স্কুল ও মাদরাসার মাঠে প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়।
পোষ্টকামুরী গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত একাব্বর হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত গত বছরের (৬ জুন) মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
বিভিন্ন মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজ শেষ করে গ্রামের লোকজন যার যার পশু নিয়ে মাঠে আসতে থাকেন। এ বছরও একইভাবে কোরবানি করা হয়েছে। কয়েকজন গ্রামের সুবিধাজনক স্থানে কোরবানি করে তার নিজ দায়িত্বে কোরবানি দেয়া পশুর এক তৃতীয়াংশ মাংস এবং স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে সামাজিক কাউন্টারে জমা করেন।
এবার গ্রামটিতে কোরবানি হওয়া ৯৪টি গরুর ৫ হাজার ১১৩ ও ২৩টি খাসির ১২১ কেজি মাংস কাউন্টারে জমা করা হয়। জনসংখ্যা হিসেবে প্রতিজনকে ৮০০ গ্রাম করে মাংস বিতরণ করা হয়। আর এ কাজে গ্রামের বিভিন্ন বয়সের দুই শতাধিক লোক স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন। গ্রামের এক হাজার ১৫৯ পরিবারের পাঁচ হাজার ৩৮৩ জন লোকের মধ্যে ৮০০ গ্রাম করে মাংস বিতরণ করা হয়।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় সহস্রাধিক দুস্থ মানুষের মধ্যে ৫০০ গ্রাম করে মাংস বিতরণ করা হয়েছে বলে গ্রামের লোকজন জানান। পরে অবশিষ্ট থাকা মাংসও গ্রামের লোকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। কোরবানির দুই সপ্তাহ আগে থেকে গ্রামের লোকজন একাধিক সভা করেন। পাড়ায় পাড়ায় স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে পরিবারের প্রধান এবং জনসংখ্যা তালিকাভুক্ত করান। তালিকার দিন নবজাতকের জন্ম হলেও তাকেও সমান হারে মাংস দেয়া হয় বলে গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন।
বিগত ২০০০ সালে মির্জাপুর পৌরসভা গঠিত হয়। একটি উপনির্বাচনসহ পাঁচটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামটি থেকে প্রতিবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। পৌরসভার সর্বশেষ মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সালমা আক্তার পোষ্টকামুরী গ্রামের পুত্রবধু। তিনি সাবেক মেয়র প্রয়াত সাহাদত হোসেন সুমনের স্ত্রী। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ গ্রামটিতে বসবাস করলেও দুই যুগ প্রতিবছর একমত হয়ে একসাথে পশু কোরবানির আয়োজন করে থাকেন বলে গ্রামটির বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান।