
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে জমি সংক্রান্ত পুরোনো বিরোধের জেরে আ. মালেক (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে পরিকল্পিতভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করে প্রকাশ্যে গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগে ৬ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ভূঞাপুর পৌরসভার নতুন কাঁচা বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। পরে স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের সদস্য ও জনগণের হস্তক্ষেপে আ. মালেক প্রাণে রক্ষা পান। ভুক্তভোগী আ. মালেক ঘাটাইল উপজেলার মনোহরা গ্রামের মৃত এছাক আলীর ছেলে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ভূঞাপুরের বাহাদীপুর গ্রামের মৃত তুলা মিয়ার ছেলে ইলিয়াস জামান (৪০), ঘাটাইলের আথাইল শিমুল গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে আজগর বাকা (৪০) ও তার ছেলে সজিব (২১), মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে আ. ছামাদ (৪০), ছামাদের ছেলে ইকন (২০) ও মফিজের ছেলে রহিম (২০)।
এদিকে এ ঘটনায় ঘাটাইলের আথাইল শিমুল গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে বারেক (৪০) ও আকাব্বর আকা (৫০), আকাব্বর আকার ছেলে রেজাউল (২৩), মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ (৫০) সহ অজ্ঞাত আরো ৫-৭ জন জড়িত। তারা পলাতক রয়েছেন।
ভূঞাপুর থানায় দায়ের করা অভিযোগে জানা যায়, মালেকের সঙ্গে একই এলাকার আব্দুল্লাহর সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও অভিযুক্তরা কোনো সমঝোতায় আসেনি। উপরন্তু পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকালে ভূঞাপুর নতুন কাঁচা বাজারে জাম কেনার সময় মালেক মন্ডলকে অতর্কিত ভাবে হামলা করে।
এক পর্যায়ে প্রাণ বাঁচাতে তিনি ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজের দিকে দৌঁড় দেন। তখন হামলাকারীরা ‘মোবাইল চোর’ বলে চিৎকার করে পিছু নিয়ে কলেজ মাঠের সামনে গিয়ে আবারও মালেক মন্ডলকে ধরে মারধর শুরু করে। পরে কলেজ চত্বরের লোকজনসহ সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা মালেককে উদ্ধার করে ও দুইজন হামলাকারীকে আটক করে ভূঞাপুর থানায় প্রেরণ করে। এ সময় বাকী হামলাকারীরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও মালেকের অভিযোগের ভিত্তিতে থানা পুলিশ আরও চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনকে টাঙ্গাইল জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ভূক্তভোগী মালেক মন্ডল জানান, তিনি বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকালে বাজারে বাচ্চাদের জন্য জাম কিনতে গিয়েছিলেন। জাম কেনার এক পর্যায়ে হঠাৎ ইলিয়াস কিছু জাম হাতে নিয়ে অতর্কিতভাবে তার মুখ চেপে ধরে ও আজগর বাকা বলেন ’শালার পুতেরে শেষ করে দে’। তখন তাদের সাথে থাকা অন্যরা দলবদ্ধ ভাবে তার উপর হামলা করে। পরে কৌশলে দৌঁড়ে পালিয়ে কলেজের দিকে গেলে সেখানেও আবার তাকে ‘মোবাইল চোর’ অপবাদ দিয়ে মব সৃষ্টি করে গণপিটুনি দেয়। সেই সময় মাঠে থাকা সেনা সদস্য ও স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। তবে সেনা সদস্যরা ইলিয়াস ও আজগর বাকাকে আটক করে। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ভূঞাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম জানান, ঘটনাটি খুবই ন্যাক্কারজনক। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।