স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে জিবিজি কলেজের নৈশপ্রহরী ইউসুফ (৩৫) হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করেছেন পুলিশ। কলেজের সহকর্মীর হাতেই খুন হন নৈশপ্রহরী ইউসুফ। আটককৃত তিনজনের মধ্যে ২ নৈশপ্রহরী সবুজ মিঞা ওরফে ফরিদ ((৪৫) ও জুয়েল (৩৫) টাঙ্গাইল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। তারা দু’জন সরাসরি ইউসুফ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সোমবার (১৬ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকতা এসআই রাজু আহমেদ।
পুলিশ জানায়, ভিকটিম ইউসুফ, আসামি জুয়েল ও সবুজ মিঞা ওরফে ফরিদ ঘাটাইল ব্রাহ্মণশাসন সরকারি কলেজে নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জুয়েলের বাড়ি ঘাটাইল উপজেলার গৌরিশ্বর গ্রামে। অপর আসামি সবুজ মিঞা ওরফে ফরিদের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার লাংঙ্গুলিয়া গ্রামে।
ইউসুফের বাড়ি কলেজর পূর্বপাশে থাকায় প্রতিনিয়ত সূর্য ডোবার আগেই কলেজে এসে বাতি জ্বালাতেন ইউসুফ। জুয়েল ও ফরিদ অনেক দেরিতে কলেজে আসতেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। গত (৫ জুন) কর্মরত তিন নৈশপ্রহরী রাতে যথারীতি ডিউটি পালন করেন। এদের মধ্যে ইউসুফের শরীর খারাপ থাকায় কলেজের বারান্দায় মশারি টাঙিয়ে শুয়ে পড়ে। রাত আনুমানিক পৌনে ১টা থেকে আড়াইটার সময় ইউসুফ ঘুমিয়ে পড়লে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ফরিদ ও জুয়েল ঘুমন্ত অবস্থায় ইউসুফের বুকের ওপর উঠে শ্বাসরোধ এবং হাত-পা বেঁধে ফেলে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে কাথা দিয়ে পেঁচিয়ে লাশ কলেজের উত্তর-পূর্ব কোণে ডোবায় কচুরি পানা দিয়ে ঢেকে রাখে। নিখোঁজের ৬ দিন পর লাশ পঁচে দুর্গন্ধ বের হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ইউসুফের লাশ শনাক্ত করে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ মর্মান্তিক ঘটনায় পুলিশ সন্দেজনকভাবে তিনজনকে সঙ্গে সঙ্গে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ইউসুফের স্ত্রী আল্পনা খাতুন বাদী হয়ে গত (১০ জুন) ঘাটাইল থানায় আটককৃত তিনজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত (১১ জুন) টাঙ্গাইল আদালতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমাণ্ড চাওয়া হলে আদালত ৩ দিন মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের মধ্যে ফরিদ ও জুয়েলের তথ্য অনুযায়ী, গত (১৩ জুন) ইউসুফের ব্যবহৃত টর্চ লাইট, নোকিয়া মোবাইল ফোন, বাঁশি ও বল্লম মাটিতে পুঁতিয়ে রেখেছে বলে স্বীকার করেন। পরে পুলিশ তাদেরকে নিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখা জিনিসপত্র কলেজের পাশ থেকে উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আসামিদেরকে টাঙ্গাইল আদালতে হাজির করা হলে সবুজ মিঞা ওরফে ফরিদ ও জুয়েল নৈশপ্রহরী ইউসুফ হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, মামলায় আটককৃত তিন আসামির মধ্যে নৈশপ্রহরী হত্যার সঙ্গে দুজন সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে আদালতে স্বীকার করেছেন। মামলাটি তদন্ত চলছে।