
এরশাদ মিঞা, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের প্রয়াত টানা চারবারের সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেনের সদরের বাড়িটি প্রতিদিনই নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের পদচারণায় মুখর ছিলো। বিগত ২০২১ সালের (১৬ নভেম্বর) তিনি মারা গেলে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের যাতায়াত কমতে থাকে। বিগত ২০২২ সালের (৩১ মার্চ) উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মীর শরীফ মাহমুদকে সভাপতি ও প্রয়াত একাব্বর হোসেনের ছেলে ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্তকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পুণরায় একাব্বর হোসেনের বাসায় শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের যাতায়াত। বিগত ২০২৪ সালের (৬ জুন) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে বাসাটি পূর্বের অবস্থায় মুখরিত হয়ে উঠে।
গত (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হয়। আওয়ামী লীগের সকলস্তরের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর উপজেলা পরিষদ বিলুপ্ত করা হলে ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত চেয়ারম্যান পদ হারান। একাধিক মামলায় আসামী হলে আত্মগোপনে যান সীমান্ত। প্রয়াত একাব্বর হোসেনের বাড়িটি দীর্ঘ দেড় যুগ পর জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে।
বিগত ২০২২ সালের (১৬ জানুয়ারি) উপনির্বাচনে খান আহমেদ শুভ নৌকা প্রতীকে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি সদরের সৈয়দ টাওয়ারের একটি ফ্লাট থেকে রাজনীতি পরিচালনা করেন। ওই ভবনটি দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের পদচারাণায় মুখরিত হয়ে উঠে।
এভাবে শুধু প্রয়াত একাব্বর হোসেন ও খান আহমেদ শুভর বাড়িই নয়, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর খন্দকার আব্দুল হাফিজ ও রাফিউর রহমান ইউসুফজাই সানি চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের টানা তিনবারের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, প্রয়াত মেয়র সাহাদত হোসেন সুমনের বাসাটিও জনবানবশূণ্য রয়েছে।
গত (৫ আগস্টের) পর থেকে আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা লাপাত্তা। তারা দেশে আছেন না দেশের বাইরে, কোনো তথ্যই মেলেনি। গত (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে ও উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে সামনে মুক্তির মঞ্চে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের ভবন ভাঙচুর ও মির্জাপুর ক্লাব ভবনের দোতলায় আগুন দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে মাঠে নেই।
তবে বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সরব রয়েছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে দল দুটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে নিয়ে মাঠে রয়েছেন। প্রতিদিন সভা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, মৃত বাড়ি, বিয়ে বাড়িসহ কোন অনুষ্ঠানই বাদ দিচ্ছেন না তারা।
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, কেন্দ্র্রীয় কমিটির সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসীন হলের সাবেক জিএস সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব এবং বাংলাাদেশ জামায়াত ইসলামী টাঙ্গাইল জেলা শাখার শিক্ষা বিষয়ক সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মাও. আব্দুল্লাহ তালুকদার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
গত (৫ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকারের পতন দিন থেকে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী ও সাঈদ সোহরাবের বাসায় নেতাকর্মীদের যাতায়াত কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মী কুশল বিনিময় ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তাদের সহযোগিতা নিচ্ছেন।
এ আসনে বিগত ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রথমে সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব বিএনপির মনোনয়ন পান। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কয়েকদিন পর তার মনোনয়ন পরিবর্তন করে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীকে দেয়া হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একাব্বর হোসেনকে পরাজিত করে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এমপি নির্বাচিত হন। এরপর সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব কোন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। বিগত ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী প্রয়াত একাব্বর হোসেনের কাছে পরাজিত হন।
বিগত ২০১৮ সালের (৬ নভেম্বর) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের প্রধান ফটক থেকে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী গ্রেপ্তার হন। বিগত ২০২৩ সালের (৩১ অক্টোবর) এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভর ব্যক্তিগত সহকারি মীর আসিফ অনিকের নেতৃত্বে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এবং কেন্দ্র্রীয় কমিটির সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসীন হলের সাবেক জিএস সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পিছিয়ে নেই বাংলাাদেশ জামায়াত ইসলামী টাঙ্গাইল জেলা শাখার শিক্ষা বিষয়ক সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মাও. আব্দুল্লাহ তালুকদার। তিনি একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের বিভিন্ন স্থানে নিজের প্রার্থীতা জানান দিয়ে পোস্টার সাটিয়েছেন। তিনিও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সভা-সমাবেশ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।