
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে জামাইয়ের হাতে শাশুড়ী খুনের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত (২৮ জুন) রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাদেরকে টাঙ্গাইল আদালতে নেয়া হয়।
ঘাটাইল উপজেলার মানাজী সিকদার বাড়ি এলাকায় গত (২০ জুন) হনুফা বেগম (৭০) নামের এক বৃদ্ধার খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন গত (২১ জুন) ছেলে হুমায়ুন সিকদার বাদী হয়ে ঘাটাইল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বাদী হুমায়ুন শিকদার দীর্ঘদিন যাবৎ ঘাটাইল এলাকায় পোল্ট্রি ব্যবসা করে আসছেন। ব্যবসার সুবাদে উপজেলা শহরে বাসা নিয়ে থাকেন। তার মা নিহত হনুফা বেগম (৭০) তার স্বামীর বসত ভিটা মানাজী সিকদার বাড়িত একাই বসবাস করতেন।
গত (২০ জুন) রাত ১০ টার দিকে এশার নামাজ আদায় ও রাতের খাবার শেষে প্রতিদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়েন হনুফা বেগম (৭০)। পরদিন গত (২১ জুন) সকাল ৯ টার দিকে প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করেও কোন সারাশব্দ না পেয়ে এক পর্যায়ে ঘরে প্রবেশ করে হনুফা বেগমকে বিছানায় নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তার গলায় কালচে দাগ, বাম চোখের নিচে ও কপালে আঘাতের চিহ্ন দেখে তাকে হত্যা করা হয়েছে এমনটা সন্দেহ করা হয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে এবং মৃতদেহ দেখতে পায়। নিহত হনুফার পরিহিত স্বর্ণের কানের দুল, দুইটি বালা ও একটি চেইন পাওয়া যায়নি বলে আত্মীয়রা পুলিশকে জানায়। পরে ঘাটাইল থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।
পরে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নির্দেশে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘাটাইল থানা পুলিশের একটি দল উপজেলার ছামনা গ্রামের কাদেরের ছেলে আমিনুরকে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারপর তথ্য প্রযুক্তি অনুযায়ী টাঙ্গাইল, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, নেত্রকোনা অভিযান চালিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর থানার মাটিয়ারবন্দ এলাকা হতে আসামি আমিনুর ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর আমিনুর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায়, ঘাটাইল উপজেলার পুরলীহাসন গ্রামের মৃত মকবুলের ছেলে শাহজাহান নিহত হনুফা বেগমের মেয়ের জামাই ও আমিনুর একত্রে হনুফা বেগমকে গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। গ্রেফতার আমিনুরের কাছ থেকে নিহত হনুফা বেগমের ব্যবহৃত স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অপর আসামি শাহজাহানকে ঘাটাইলের আমিন বাজার এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নিহত হনুফা বেগম সৌখিন মানুষ ছিলেন। তিনি সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতেন। তিনি সব সময় স্বর্ণালঙ্কার পরিহিত অবস্থায় থাকতেন।
ঘাটাইল থানার সাব-ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজু আহমেদ জানান, আসামীদের টাকার প্রয়োজন হওয়ায় ঘাতক শাহজাহানের সাথে আমিনুর ঘটনার ৩ দিন আগে থেকে পরিকল্পনা করে। যেহেতু শাহজাহান মিয়ার শাশুড়ী বাড়িতে একা থাকেন, তাই তার কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার কেড়ে নেয়া সহজ হবে। সেটা বিক্রি করে টাকার চাহিদা মেটাতে পারবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত (১৯ জুন) রাতে হনুফা বেগমের ঘরে গিয়ে তার কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার কেড়ে নেয়ার পরিকল্পনা করলেও সেদিন বৃষ্টি থাকায় তারা দু’জন যেতে পারেনি। পরিকল্পনানুযায়ী গত (২০ জুন) দিবাগত রাত অনুমান ২ টার দিকে নিহত হনুফা বেগমের বাড়ির সামনে গিয়ে আমিনুর ও শাহজাহান নিহত হনুফাকে ফোন দিয়ে দরজা খুলে দিতে বলে। শাহজাহান নিহতের মেয়ের জামাই হওয়ায় হনুফা বেগম দরজা খুলে দেয়। এক পর্যায়ে শাহজাহান ও আমিনুর নিহতের পরিহিত গলার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ঘরের মেঝেতে ফেলে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের চাহিদা অনুযায়ী নিহত হনুফা বেগমের পরিহিত স্বর্ণালংকার খুলে নিয়ে আমিনুর ও শাহজাহান হনুফাকে মাটি থেকে ওপরে তুলে খাটে শুয়িয়ে রেখে পালিয়ে যায়।