
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের সখীপুরে ৫০ শতাংশ জমিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বীজাগারের জন্য দুটি স্থাপনা ও একটি আবাসিক ভবন রয়েছে। অবশ্য স্থাপনাগুলো পরিত্যক্ত। সামনের বেশির ভাগ অংশই ছিল মুক্ত খোলা মাঠ। পুরো মাঠ এখন বেদখলে চলে গেছে। গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ৪০টি দোকান। দোকান ভাড়ার টাকা নিচ্ছে হাট-ইজারাদার ও জমির মালিকানা দাবিদার।
অন্যদিকে বীজাগারের ৫০ শতাংশ জমির সীমানার মধ্যে বিগত ২০০৮ সালে একাধিক ব্যক্তি মালিকানা দাবি করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ৩ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। পরে কৃষি গুদাম ঘরের ১০৬ নম্বর দাগের জমিতে একটা তিনতলা ভবন নির্মাণ করে দখলে নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। জমির প্রকৃত মালিক সখীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর। যারা এই দখলদারীর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ বিষয়ে কোনো আক্ষেপও নেই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।
এর আগে ভবন তিনটিতে ১৯৭৬ সালে সখীপুর থানা, ২০০০ সাল থেকে বীজাগার ভবন দুটিতে সখীপুর পৌরসভা কার্যালয় এবং ১৯৬৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আবাসিক ভবনটিতে গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় ছিল।
জানা গেছে, বিগত ১৯৬১ সালে ১৯৯২ নম্বর প্রত্যর্পণ দলিলের ভিত্তিতে সাতজন ব্যক্তি ৫০ শতাংশ জমি সরকারি কৃষি বীজাগার স্থাপনের জন্য দান করেন। ওই জমি সখীপুর পৌর তালতলা চত্বর ঘেঁষা। পৌর এলাকার সবচেয়ে মূল্যবান জমি এটি। যার মূল্য শত কোটি টাকার ওপরে।
দলিলের বর্ণনা থেকে জানা গেছে, ১০৮ নম্বর দাগে ১৯ শতাংশ, ১১০ নম্বর দাগে ১৯ শতাংশ ও ১১১ নম্বর দায়ে ১২ শতাংশ জমি রয়েছে। জমির পশ্চিম পাশে কৃষি গুদামঘরের একতলা একটি ভবন ও একটি টিনের ঘর রয়েছে। যার অবস্থান ১১১ নম্বর দাগে। এই দুটি স্থাপনা তুমি বীজ সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয়। দক্ষিন অংশে ১৬০ নম্বর দাগে ৫০ হাত টিনশেড ভবনটি আবাসিক। এখন সবই পরিত্যক্ত। বর্তমানে আবাসিক ভবনটি মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত।
উত্তর পাশে সড়ক যৌথ সীমানা প্রাচীরটিও কৌশলে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙা প্রাচীরের ওপর বসানো হয়েছে আস্থায়ী দোকান। অবৈধ ৪০ দোকানের মধ্যে ফলমূল, চা, মনিহারি, জুতা, কাঁচাপণ্য, কাপড়ের দোকান ও দুধের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে ৭-৮টি দোকান দাতা পরিবার দাবিদার ও বাকি সব দোকানের ভাড়া তুলছেন হাট ইজারাদার। দুই দশকে এভাবেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গুদামঘরের জমিটি হাতছাড়া হয়েছে।
এদিকে প্রত্যর্পণ দলিলের দাতা পরিবারের উত্তরাসুরিরা দলিলে উল্লিখিত শর্ত মোতাবেক ওই জমি তাদের নিজেদের দাবি করে টাঙ্গাইল আদালতে ১৬৪ ধারায় মামলা করেন। মামলায় বাদীপক্ষ হেরে যান। আপিল চলমান রয়েছে। বাদী রাহেলা বেগম বলেন, দলিলের শর্তানুযায়ী সরকার জমি ছেড়ে না দেওয়ায় মামলা করা হয়েছে।ফল ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর নির্ধারিত পরিমাণ টাকা হাটের ইজারাদারকে পরিশোধ করতে হয়।
জমিদাতা পরিবারের সদস্য রফিকুল ইসলাম খান বলেন, দলিলের শর্ত অনুযায়ী মালিকানা এখন আমাদের। সরকারের উচিত দলিলের দাগ অনুযায়ী পরিমাপ করে আমাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া। হাট ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগের হাট ইজারাদারের মতো আমিও ভাড়া তুলছি। জমিটি সরকারি কিনা তা জানেন না তিনি। মুক্তিযোদ্ধা ভবনের জমিদাতা শামসুল হক বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বিক্রি করেছি।
গজারিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বিগত ২০১২ সাল পর্যন্ত গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ জমির খাজনা দিয়ে এসেছে। মামলা হওয়ার পর খাজনা আদায় স্থগিত করা হয়েছে।
দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য না করে সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন বলেন, বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সখীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের প্রশাসক এবং সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনী জানান, ১০৬ নম্বর দাগের মালিকানা নিয়ে জটিলতা আছে। সঠিক মালিকানা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।






